জেল হত্যা দিবসঃ ৩৮ বছর কেটে গেলেও জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হয়নি!
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ৩ নভেম্বর (রোববার) ঐতিহাসিক জেল হত্যা দিবস। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রায় আড়াই মাস পরে একই বছরের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং কামরুজ্জামানকে। দিনটি স্মরণ করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই উপলক্ষে বোরবার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও সকল দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় অর্ধনমিত রাখা, কালো পতাকা উত্তোলন এবং কালো ব্যাজ ধারণ। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জমায়েত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং সকাল ৭টায় ১৫ আগস্টে নিহত ও জাতীয় চার নেতার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত। এছাড়া রাজশাহীতে কামারুজ্জামানের কবরেও পুষ্প স্তবক অর্পণ, ফতেহা পাঠ, মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত করা হবে। এর বাইরে এবার শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা করে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক ঐতিহাসিক জনসভা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। দুপুর ২টায় এ জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস।
দলীয় সূত্র জানায়, রোববার জনসভা শোকের হলেও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসমাগমের মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করা হবে। আওয়ামী লীগ দুর্বল নয় এবং ১৮দলীয় জোটের আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে থাকার প্রাক নির্বাচনী শোডাউন হবে এটি। তবে দীর্ঘ ৩৮ বছর কেটে গেলেও এখনো জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বিচার-প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। সর্বশেষ ২০১২ সালে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সারসংক্ষেপ সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছে। এতে একাধিক আসামীকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিল এবং নিম্ন আদালতের দেয়া সাজা বহাল রাখার আরজি করা হয়েছে। পরবর্তীতে আপিলের শুনানির দিন ধার্য করার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন করার কথা। এই জঘন্য হত্যাকাণ্ড মামলাটি ২১ বছর থেমে ছিল। ঘটনার পরের দিন তৎকালীন উপ-কারা মহাপরিদর্শক কাজী আবদুল আউয়াল লালবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় উল্লেখ করা হয়, সেদিন রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে চার-পাঁচজন সেনা সদস্য কারাগারে ঢুকে চার নেতাকে হত্যা করেন। এরপর দীর্ঘ বিচার বিরতি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয় এবং নতুন করে মামলাটি গতি পায়। ১৯৯৮ সালের ১৫ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসএসপি আবদুল কাহহার আকন্দ ২১ জনকে আসামী করে অভিযোগপত্র দেন। ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল এই মামলার প্রথম সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এরপর ২০০৪ সালের ২৪ অক্টোবর নিম্ন আদালতের তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ মো. মতিউর রহমান এই মামলার পলাতক আসামী রিসালদার মোসলেম উদ্দিন, দফাদার মারফত আলী ও আবুল হাশেম মৃধাকে মৃত্যুদন্ডাদেশের নির্দেশ দেয়। মামলার অন্য আসামীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট রায় দেন। রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য আট আসামি দফাদার মারফত আলী শাহ, মো. আবুল কাশেম মৃধা, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা এবং এ কে এম মহিউদ্দিন আহাম্মদ খালাস পান। তবে অন্য আট আাসামী হাইকোর্টে আপীল না করায় তাদের দণ্ড বহাল থাকে।