ঝিনাইদহের ফটকী নদী থেকে বালি উঠিয়ে বিক্রি, পাড় ধ্বসে ক্ষতির আশঙ্কা এলাকবাসীর
আহমেদ নাসিম আনসারী,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া ফটকী নদী থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালি উঠিয়ে বিক্রি করছেন একটি মহল। দুই জেলার সীমান্তের নাটোপাড়া ও মশাখলী নামক স্থানে গত এক মাস ধরে চলছে এই বালি উঠানোর কাজ। নদী থেকে এভাবে বালি উঠিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে। এদিকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে এভাবে বালি উঠানোর কারণে নদীর দুই পাড় ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পাড়ের জমির মালিকেরা। তারা এই বালি উঠানোর প্রতিবাদ করলেও এর সাথে জড়িতরা তা মানছেন না। স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে তারা বালি উঠানো অব্যাহত রেখেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মাগুরার পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে আর ঝিনাইদহের পূর্ব সীমান্তবয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী ফটকী নদী। ঝিনাইদহের বেগবতী আর খুলনার ভৈরব নদীতে মিলেছে এই ফটকী নদী। এই নদীতে জোয়ার-ভাটা বহমান। কালীগঞ্জ উপজেলার নাটোপাড়া গ্রামের পরে মাগুরার শালিখা উপজেলার মশাখালী গ্রাম। এই দুই গ্রামের মাঝে ড্রেজার বসিয়ে বালি উঠাচ্ছেন বালি ব্যবসায়ী ঝিনাইদহের শাহিনুর রহমান। গত এক মাস কখনও নাটোপাড়া আবার কখনও মশাখালীর সীমানায় ড্রেজার বসিয়ে বালি উঠাচ্ছেন। আর বালি স্তুপ করছেন নাটোপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নদীর অপরপ্রান্তে। ড্রেজার মেশিনে কর্মরত শ্রমিক সাইফুল হোসেন জানান, ঝিনাইদহের ভুটিয়ারগাতি এলাকার শাহিনুর রহমান তাদের বালি উঠানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। ড্রেজার মেশিনটিও তার। এই বালি উঠিয়ে স্তুপ করে রাখার পর ঠিকাদারদের কাছে বিক্রি করা হবে বলে শ্রমিকরা জানান। প্রতি গাড়ি বালি ১৮ শত থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে তারা জানান। ইতোমধ্যে প্রায় ৪০/৪৫ গাড়ি বালি উঠিয়েছেন শ্রমিকরা। নদীর দুই পাড়ে কৃষি জমি আছেন এমন অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে স্থান থেকে বালি উঠানো হচ্ছে ওই স্থানের দুই পাড়ে বেশীর ভাগ জমি নাটোপাড়া গ্রামের কৃষকের। যারা ড্রেজারের সাহায্যে বালি উঠানোর কারনে তাদের জমি নদীতে ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা করছেন। একজন কৃষক জানান, তার দেড় বিঘা জমি আছে ওই স্থানে, যার সবটুকু এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদীর তলদেশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় তাদের কৃষি জমি নদীর গর্ভে চলে যেতে পারে। তাছাড়া নদীর উত্তর পাশ দিয়ে রয়েছে তাদের মাঠে যাওয়ার রাস্তা। পাঁয়ে হেটে তারা ওই স্থান দিয়ে মাঠে যেয়ে থাকেন। সেই রাস্তাটিও নদীর মধ্যে ধসে পড়বে। কৃষকরা জানান, বর্তমানে যে স্থান থেকে বালি উঠানো হচ্ছে তার ৪/৫ শত গজ পশ্চিম থেকে ইতিপূর্বে ড্রেজার দিয়ে বালি উঠানো হয়েছিল। যে কারণে ওই স্থানে বেশ কিছু জায়গা নদীর মধ্যে ধসে পড়েছে।
কৃষকরা জানান, এবার বালি উঠানো শুরু করলে তারা বাঁধা দিতে যান। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু ব্যক্তিকে তারা হাত করে নেয়ায় সাধারণ কৃষকদের প্রতিবাদ কোন কাজে আসেনি। মেশিন মালিক শাহিনুর রহমান তার বালি উঠানো অব্যাহত রেখেছে। কৃষকরা এ ব্যাপারে দ্রুত প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে বালি বিক্রেতা শাহিনুর রহমানন দাবি করেন, এতে নদীর কোন ক্ষতি হচ্ছে না। বরং বালি বিভিন্ন সরকারী কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঠিকাদাররা বালি না পেলে রাস্তার কাজ করতে পারবে না। যে কারনে তিনি নদীর মাঝ থেকে বালি উঠাচ্ছেন, পাড় থেকে উঠাচ্ছেন না। মাগুরার শালিখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার জানান, ইতিপূর্বে একবার বালি উঠাতে শুরু করেছিল একটি মহল। তাদের নিষেধ করা হয়েছে। তিনি সরেজমিনে যাবেন এবং দেখবেন। আবার তারা বালি উঠাতে শুরু করলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।