জাতীয় পার্টি থেকে এরশাদ ও জাফরের পাল্টপাল্টি বহিস্কার
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সরাসরি দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকান্ড, দলের বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিবৃতি প্রদান এবং দলীয় নীতি-আদর্শ উপেক্ষা করে পার্টির নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে উস্কানিমূলক বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশের দায়ে কাজী জাফর আহমেদকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদসহ দলীয় সকল পদ ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। ২৮ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) দুপুরে রাজধানীর বারিধারা এলাকায় একটি রেস্তোরাঁয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এ কথা জানান এরশাদ।
এরশাদ আক্ষেপ করে বলেন, উনি (কাজী জাফর) যখন অসুস্থ ছিলেন, তখন ৩০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে ওনার চিকিত্সা করিয়েছি। তিনি বলেছেন, আপনি আমায় জীবন দিয়েছেন। চিরকাল আপনার সঙ্গে থাকব। উনি এখন প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিবৃতি দিচ্ছেন। তিনি আজ থেকে আর আমার দলে নেই। নির্বাচন প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, দেশের যে পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন করা যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। দলীয় গঠতন্ত্রের ৩৯ ধারা মোতাবেক এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এই সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর হবে। এখন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির কোন পদ-পদবী ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করলে তা অবৈধ বলে বিবেচিত হবে। মতবিনিময়কালে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ এখনো নিশ্চিত হয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া জাপা নির্বাচনে যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় আছে। মনে করেছিলাম আমি নির্বাচনে গেলে সব দল যাবে- এমন মন্তব্য বরে এরশাদ বলেন, সংঘাত বন্ধ হবে। কিন্তু তা হয়নি। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও তৈরি হয়নি। তাছাড়া মনোনয়নের যে সময়সীমা দেয়া হয়েছে, তার ভেতরে মনোনয়ন দাখিল সম্ভব নয়। এ অবস্থায় জাপা নির্বাচনে যাবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সাবেক এ রাষ্ট্রপতি বলেন, জোট গঠনের চেষ্টা করেছিলাম। জোটবিহীন নির্বাচন করা কঠিন হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ইসলামী দলগুলো আমার সাথে আসবে। বিশেষ করে চরমোনাই পীর। অন্য দিকে কাজী জাফরকে এরশাদের বহিষ্কার ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পরেই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে কাজী জাফর জানান, দলের গঠনতন্ত্র ‘সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘনের দায়ে’ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে বলা হয়, প্রেসিডিয়ামের ক্ষমতাকে লঙ্ঘন করে একক সিদ্ধান্তে এরশাদ তথাকথিত সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়েছেন। ‘এরশাদের লজ্জাজনক আচরণ দলের ঐক্য ও সংহতিকে বিনষ্ট করেছে’ দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির সঙ্গে এক বছর ধরে আসন ভাগাভাগির সংলাপ করে দলটির কাছে দুইবার গ্রার্থী তালিকা পাঠিয়েছেন। এর পরেও ‘সর্বদলীয় সরকারে’ এরশাদের যোগ দেয়া প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, রাজনীতিতে এ ধরনের লজ্জাজনক ঘটনার কোনো নজির আছে বলে আমার জানা নেই। এরশাদ ক্ষমতার অপব্যবহার করে দলের যেসব নেতাদের বহিষ্কার করেছেন তাদের তালিকাও বিবৃতিতে তুলে ধরেন কাজী জাফর। একথা অনস্বীকার্য যে, বারবার আপনার (এরশাদ) রাজনৈতিক ডিগবাজী, আদর্শহীনতা এবং সমস্ত দলকে আপনার আজ্ঞাবহে পরিণত করে ক্ষমতা ত্যাগের ২৩ বছরের মধ্যে আমাদের প্রাণপ্রিয় দল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পারেনি। গঠনতন্ত্রের ৩৭ ধারা মোতাবেক দলের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণটি অবিলম্বে জাতীয় কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশনে গৃহীত হবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, গঠনতন্ত্রের ৩৭ (৪) ধারা মোতাবেক আপনার অপসারণপূর্বক ৩৭ (৫) ধারায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে জাতীয় পার্টির সুমহান মর্যাদা, ঐক্য ও সংহতি পুনঃগ্রতিষ্ঠিত করা হবে। এরশাদকে উদ্দেশ্য করে কাজী জাফর বলেন, আপনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান পদে থাকার সকল প্র্রকার অধিকার হারিয়েছেন। আপনাকে দলে সকল পর্যায়ে কোনো গ্রকার অংশগ্রহণ করা হইতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো যাচ্ছে।