এখনো যাদের নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ঘুম ভাঙ্গে নি— তারা নিজেদের ঘুম ভাঙ্গারও সুযোগ পাবেন না
মুনীব রেজওয়ান:
ধরলাম সমঝোতা হলো একটা প্রক্রিয়ায় গ্রহনযোগ্য নির্বাচনও হয়ে গেল। দেশে বিদেশে সবাই মেনেও নিলেন সেই নির্বাচন তাতেই কী সব ঠিক হয়ে গেলো? যদি এমন মনে করে থাকেন তাহলে আপনি নিশ্চিত মূর্খের স্বর্গে নাক ডাকাচ্ছেন। একবার ভাবুন ! যদি মতি মিয়াদের সকল জরীপ মিথ্যা প্রমাণিত হয়? যদি জামাত-বিএনপি জোট সেই নির্বাচনে হেরে যায় তাহলে কী তারা নির্বাচন মেনে নেবে? আমি অন্তত নিশ্চিত করে বলতে পারি তারা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করবে তো করবেই চলমান সহিংসতা আরো বহুগুণ বাড়িয়ে মানুষের প্রাণ অতিষ্ঠ করে ছাড়বে। সবাই অবশ্য ততোক্ষণে বুঝেই যাবেন যে এই জোটের মানুষমারা আন্দোলনের মূল কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল না ছিল যুদ্ধাপরাধী বাঁচাতে সরকারকে ফেলে দেয়া —সে যে কোন ভাবেই হোক! এটা সবাই দেখেছেনও , জামাত-বিএনপি জোট জামাত সৃষ্ট হেফাজতিদের মতো উগ্র সংগঠনের সাথে নিজেদের আন্দোলন মিলিয়ে এই আল্টিমেটাম বহুবার দিয়েও গেছে। উদ্দেশ্য যদি শুধু একটি কারচুপিমুক্ত নির্বাচনই হতো তাহলে আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য উপায় বের করা এমন কঠিন কিছু ছিল না। বিরোধী দল নিজেও জানে আলোচনায় বসলেই তাদের আন্দোলন শেষ ! তাই শেখ হাসিনার টেলিফোন করাটাই বৃথা গেলো যদিও খালেদা বলেছিলেন –আলোচনার উদ্যোগ নিলেই আন্দোলন থামিয়ে দেবেন। আমরা কী দেখলাম তখন ! বেগম জিয়া তার দেয়া কথা থেকে সরে গেলেন, হরতাল থামালেন না, কায়দা করে আলোচনা বা সংলাপের সুযোগটিও নষ্ট করে দিলেন। এই ঘটনা থেকেও যদি কারো বুঝতে অসুবিধা হয় যে জামাত-বিএনপি জোট সংলাপ চায় না তিনি বা তারা বোকার স্বর্গে নাক ডাকাতে থাকুন। তাদের আন্দোলনের চেহারাটা একবার আপনার সুষ্ঠু , নিরপেক্ষ, আন্তর্জাতিক মানসিকতার আয়নায় দেখুন তো ! আহা !কী ইনোসেন্ট আন্দোলন ! কতই না গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করছেন জামাত-বিএনপি জোট ! একেবারে মুগ্ধ হয়ে এখন তাদেরকে ক্ষমতায় আনতে নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে আমরা জনগণ নিজের গায়ের চামড়া খুলে নিজেরাই পুড়িয়ে দিচ্ছি !
আন্দোলন সত্যি যদি হতো কেবল মাত্র একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ আবিষ্কারের জন্য—- সংবিধানের ভেতরে থেকেও একটি গ্রহনযোগ্য পথ দু’দলে বসে মিলে ঠিক করে নিতে পারতো–এটা একেবারে অসম্ভব কিছু ছিল না। কিন্তু গোঁয়ারের মতো গোঁ ধরা যে –এটাই আমার চাই, গণতন্ত্রে এরকম একপেশে আবদারের জায়গা কোথাও নেই। যদি না যৌক্তিক কারণ এবং জনগণের মধ্য থেকে সেই দাবী বেরিয়ে আসে। যেমন ৯৬ এ ছিল মাগুরা কিম্বা মীরপুর ১০ নির্বাচনের জঘন্য উদাহরণ কিন্তু এখন কী জাতির সামনে সেইরকম কোন উদাহরণ আছে? বরং এই সরকারের আমলে একটা নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয় নি। যেসকল মূর্খরা বলেন একই ঘটনার ঐতিহাসিক পূনরাবৃত্তি ঘটছে তারা এইসব উপাদান আর ভিন্নতা দেখছেন না—তারা সুশীল নন, দলকানা পোষা কোকিল। কেবল কুহু কুহু করেই যাচ্ছেন।
বলা হয় দেশের ৯০ ভাগ মানুষ তাদের এই তান্ডুবে আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত। কোথায় সেই ৯০ ভাগ লোক? রাস্তাঘাটে কিছু ভাড়াটে টোকাই ছাড়া কোন নেতাই তো চোখে পরছে না। আর কিভাবেই বা তারা এতো নিশ্চিত এই পরিসংখ্যানে? দৈনিক মোতির আলো কিম্বা দৈনিক তারকা মার্কা পত্রিকার পেইড কিম্বা চামচা সম্পাদকের ইচ্ছেজরীপের উপর ভিত্তি করে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত, তারো চাইতে বড়কথা গণসম্পৃক্ত একটি সরকার ফেলে দেবার চেষ্টা হাস্যকর ! মনে হচ্ছে তারা কিছু ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে আন্দিস পর্বত ধাক্কাচ্ছেন—-আর ভাবছেন একদিন পাহাড়টা পরেই যাবে।
মূল কথা যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে না পারলে জামাত নিয়ন্ত্রিত ১৮ দলীয় জোটের রাজনীতিই শেষ। তাই দেশে যে কোন উপায়ে একটি সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি করে হয় ক্ষমতায় গিয়ে তাদের বিচার বন্ধ করা নয়তো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া।
৭১ এ জনতা তাদের ভোট দেয় নি। মুক্তিযুদ্ধে তারা পরাজিত। গত নির্বাচনেও জনগণ তাদেরকে ভোট দেয় নি । তাদের সেই জ্বালা তো আছেই। জনগণের উপর সেই জ্বালা মেটাচ্ছে ককটেল মেরে, বাস রেল পুড়িয়ে, মানুষ মেরে। জামাতিরা জানে ভোটে এরা কখনোই ক্ষমতায় আসতে পারবে না তাই এই সহিংস পথ। তাদের ‘আব্বা’ পাকিদের দেখানো পথে তারা ‘ইসলামী বিপ্লব’ এর নামে কিছু তরুণকে বিভ্রান্ত করে তাদের জীবন ধ্বংস তো করছেই ==একটি অগ্রসরমান উন্নয়নশীল দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে চাইছে। এখনো নির্দলীয়, নিরপেক্ষতার ঘুম ভাঙ্গে নি–তাদের আর ঘুম ভাঙ্গার সুযোগ আছে কী না কে জানে !
লেখকঃ গবেষক ।।