সংঘাত পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান তারানকো’র

সংঘাত পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান তারানকো’র

সৌরভ চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে আর কোনো সংঘাত নয়, সব দলের আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা চায় জাতিসংঘ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে এ কথাই জানিয়েছেন জাতিসংঘের রাজনীতি বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কোনো সংঘাত চাই না। আমরা চাই সব দল সংঘাত পরিহার করে আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ নেবে।’ এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পর ৭ ডিসেম্বর (শনিবার) সন্ধ্যা ৭টায় বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেন তারানকো। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন-দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান এবং সাবিহ আহমেদ। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, এ বৈঠকের পর ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ফের খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করবেন তারানকো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথেও তার আরো কয়েক দফায় বৈঠক হবে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাথে তারানকোর বৈঠক শেষে এক সাংবাদিক সম্মেলন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। গওহর রিজভী বলেন, তারানকো প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন নির্বাচনের তফসিল পেছানো যায় কি না। এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী তাকে জানিয়েছেন-এটা নির্বাচন কমিশনের বিষয়, তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই। তবে যা করতে হবে সংবিধানের মধ্যে থেকেই করতে হবে। তারানকো জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আর আলোচনার প্রয়োজন নেই। নির্বাচনের লেভেল ফিল্ড নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটিও নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এখানেও সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।’ এ সময় তারানকো বিরোধী দলকে আলোচনায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে গণতন্ত্র বজায় রাখার চেষ্টাকেও তিনি সাধুবাদ জানান। তখন প্রধানমন্ত্রী তারানকো জানান, আগামী নির্বাচন সংবিধানের মাধ্যমেই হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর ফোনালাপকেও প্রশংসা করেন তারানকো। তিনি জানিয়েছেন, তারা কোনোরকম সহিংসতা মেনে নিতে পারবে না।’ এদিকে তারানকো বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে গণভবনে গেলেও প্রধানমন্ত্রীর সাথে একান্ত বৈঠক হয় ৪টা ৪৯ মিনিট থেকে ৫টা ৫২ মিনিট পর্যন্ত। বৈঠকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা গওহর রিজভী, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি ও শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোহবান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরে হোটেল সোনাগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তারানকো। সকাল ১০টায় মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সাথে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন তারানকো। এরপর তিনি বৈঠক করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচএম মাহমুদ আলীর সঙ্গে। তবে কোনো বৈঠক শেষেই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন না। এর আগে, সব দলের অংশগ্রহণে ‘অহিংস’ এবং ‘বিশ্বাসযোগ্য’ নির্বাচনের জন্য দুই দলের মধ্যে ‘জরুরি’ সংলাপের তাগিদ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন। সংকট নিরসনে এই সংলাপের সময় যে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে সে কথাটিও রাজনৈতিক দলগুলোকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যে জাতিসংঘ মহাসচিবের বার্তা নিয়ে আসা অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো শনিবার সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে এমনটিই জানিয়েছেন। সকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সচিবের সাথে আলাদা বৈঠকের মধ্য দিয়ে তারানকোর সফরের কার্যক্রম শুরু হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিটের বৈঠক শেষে তারানকো এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তি জানান, জাতিসংঘ যে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত দেখতে চায় এবং তার জন্য সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতার মধ্য দিয়ে একটি অংশগ্রহণমূলক সাধারণ নির্বাচন হওয়াটা জরুরি সে বিষয়টি তারানকো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে পরিস্কার করেছেন। আর ‘সংলাপের সময় খুব সীমিত’-জাতিসংঘ মহাসচিবের এই বার্তা উদ্ধৃত করে তা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন তারানকো।

আগামী নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে চায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘সর্বদলীয়’ সরকার  গঠন করে নির্বাচনেরপথে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে  দুই দলের মতভেদ নিরসনে নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগের মধ্যে তারানকোর এই সফর ‘সর্বশেষ প্রচেষ্টা’ বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

বিশেষ প্রতিনিধি