দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং কিছু কথা

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং কিছু কথা

জ-ই-মামুন:

আর মাত্র একদিন পরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ১৫৩ জন তো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েই আছেন, এখন আর কিছু রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে ভোটগ্রহন, গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার একটা সাদামাটা আনুষ্ঠানিকতা করে বাকি ১৪৭ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করা, তারপর তাদের শপথ ও আরেকবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের মাধ্যমে মহান সংবিধানের প্রবল সুরক্ষা। সংবিধান রক্ষা পাবে, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা পাবে, আর কি চাই!

আমার দুঃখ অন্য জায়গায়; ছাত্র জীবনে এরশাদের ভোট ডাকাতির নির্বাচন দেখেছি, সাংবাদিক হিসেবে ৯৬ এর ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচন দেখেছি, মাগুরার উপনির্বাচন, ঢাকা ১০ এ ফালুর উপ নির্বাচনে বিএনপির নজিরবিহীন কারচুপি এবং ভোট চুরি দেখেছি। কিন্তু ২০০৯ এর শুরুতে উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে এই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন পৌরসভা, উপ নির্বাচন আর চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ কুমিল্লাসহ অনেক সিটি নির্বাচন ছিল যে কোন রকমের প্রশ্নের ঊর্ধ্বে। সবশেষ বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা ও গাজীপুর-একযোগে এই ৫ সিটি নির্বাচনে সরকার দলীয় প্রার্থীদের লজ্জাকর পরাজয় বরং সরকারের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে এভাবে যে এই সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেনা।

কিন্তু আমার আশংকা, কালকের নির্বাচনের পরে মানুষ আগের এতগুলো নির্বাচনে সরকারের যে ইতিবাচক ভূমিকা- সব ভুলে যাবে। এই সরকারও বিএনপির সমপর্যায়ে চলে আসবে ভোট ডাকাতি বা ভোটার বিহীন নির্বাচন আয়োজনের দিক দিয়ে।

এদেশের মানুষ কিন্তু ভালো কথা কখনো মনে রাখে না, শুধু খারাপ কথা মনে রাখে। যেমন বিএনপি জামাতের আমলে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এস এম কিবরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে, মানুষ তা এখনো মনে রেখেছে। সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে তাও মানুষ মনে রেখেছে, আরও কত সাবেক মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যকে যে মারা হয়নি সে জন্য বিএনপি জামাতের প্রতি মানুষের কোন কৃতজ্ঞতা নেই! শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা থাকাকালে কত শত সভা সমাবেশ করেছেন, একটি মাত্র সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে এবং মাত্র ৩০/৩৫ জন লোককে হত্যা করা হয়েছে, তাও কেউ ভোলেনি। বাকি সভা সমাবেশগুলোতে যে গ্রেনেড হামলা হয়নি, তা কেউ বলেনা।

ফলে কাল থেকে শেখ হাসিনার সরকারের নাম ওই পর্যায়েই উচ্চারিত হবে যে তিনি ভোটার বিহীন প্রহসনের নির্বাচন করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। একথা কারো মনেও থাকবে না যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দাবি নিয়ে বিএনপি জামাত এত মানুষের ওপর পেট্রল বোমা মারল, এত বাড়িঘর পুড়িয়ে দিল, বাস ট্রেন পোড়াল, রেল লাইন উপড়ে ফেলে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেললো- সেই দাবিটির সপক্ষে বিএনপি একটি যুক্তিগ্রাহ্য প্রস্তাবনা পর্যন্ত দিতে পারেনি যে কে হবেন সেই সরকারের প্রধান?

এত কথা বলার মূল কারণ, নির্বাচন নিয়ে শেখ হাসিনা তার আগের আস্থার জায়গাটা ধরে রাখতে পারলেন না, এই দুঃখটা আমার মত অনেককে পোড়াবে যারা আওয়ামীলীগের ক্ষমতায় থাকার সুবাদে কোটি কোটি টাকার মালিক হননি, বা ক্ষমতার অংশীদার হননি। তবে যারা টু পাইস কামিয়েছেন, তাদের জন্য ক্ষমতাই আসল কথা, কিসের ভাব আর কিসের মূর্তি- কিসের কি?

আমার ধারণা, শেখ হাসিনার জায়গায় শেখ মুজিব থাকলে এমনটা হতো না, বঙ্গবন্ধুর আপনাকে আজও বড় বেশি প্রাসঙ্গিক মনে হয়!

[জ-ই-মামুন: বার্তা প্রধান,এটিএন বাংলা]

অতিথি লেখক