নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে ইলিশের দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম দ্বিগুণ থেকে কয়েকগুণ হাঁকাচ্ছে বিক্রেতারা। পাড়ায় মহল্লায় ফেরী করে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। তবে দাম হাতের নাগালের একদম বাইরে। যারা আগে কিনতে পারেননি তাদের সবাইকে দাম দেখেই পস্তাতে হচ্ছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। বৈশাখ যত ঘনিয়ে আসছে, দিন দিন দাম আরও বেড়েই চলেছে। ১১ এপ্রিল (শুক্রবার) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাজধানীতে চৈত্র মাসে যেন ইলিশের কৃত্রিম আকাল পড়ে গেছে। যাও মিলছে তার দাম খুচরা বাজারে গিয়ে সর্বসাধারণের সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাজারে ইলিশ নেই। দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে বাংলা নববর্ষ, পান্তা ভাতে ইলিশ যেন দিনটির অন্যতম অনুষঙ্গ। ইলিশ মাছ আর পহেলা বৈশাখ যেন একে অন্যের পরিপূরক। এমনিতেই নববর্ষের আগে বেড়ে যায় চাহিদা তার উপর সরকারি নিষেধাজ্ঞায় এবার বাজার ইলিশ শুন্য। একজন বিক্রেতা বলেন, এখন ইলিশ ধরা নিষেধ তাই বাজেরে ইলিশের সরবরাহ কম।
পহেলা বৈশাখ মানেই ইলিশ পান্তা বাঙালির প্রিয় খাবার। এটা বলার অপেক্ষা রাখে বৈশাখে পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ ভাজা আর আলু ভর্তি থাকা চাইই- চাই। বাংলা পঞ্জিকা অনুযায়ী বৈশাখ আসতে এখনো ৩ দিন বাকি। এ হিসেবে পহেলা বৈশাখ হচ্ছে আগামী ১৪ এপ্রিল। মাঝখানে আরো ৩ দিন থাকলেও এরই মাঝে বেড়েছে ইলিশের দাম। আর সুযোগ বুঝে সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরবরাহ কম এই অজুহাতে রাজধানীর মাছের বাজারে যেন আকাল পড়ে গেছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এক হালি ইলিশের দাম হাকানো হচ্ছে ২৮ হাজার টাকা। যা ইলিশের ভরা মৌসুমে মাত্র আড়াই হাজার টাকায় কেনা সম্ভব। বৈশাখ ঘনিয়ে আসার সাথে দাম আরো বাড়বে বলে ক্রেতাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা। প্রতিবছরই বৈশাখ এলে বাজারে ইলিশ নিয়ে হৈ-চৈ পড়ে যায়। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু এবার ইলিশ নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে একটু বেশী। যাত্রাবাড়ি আড়তের মাছ ব্যবসায়ী জমির জানালেন এবার তার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আড়াই টন ইলিশের অর্ডার আছে। এজন্য তিনি বাজারে খুব একটা বিক্রি করছেন না। তাছাড়া দেদারছে সীমান্ত দিয়ে ভারতেও পাচার হচ্ছে বলে তিনি জানান। বাজারে ইলিশ কিনতে সৌখিন ক্রেতাদের আনাগোনাও বেড়েছে। যারা পারছেন কিনে নিচ্ছেন। অনেকে দরদাম করেই চলে যাচ্ছেন। কারওয়ান বাজারের ইলিশের মোকামে আমদানি প্রচুর দেখা গেলেও দাম অনেক বেশি। শনিবার কারওয়ান বাজারে দুই কেজি ওজনে এক হালি ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১২ হাজার ৫শ’ টাকা। এত দামে ইলিশ কিনেও খুশী আরমান ভাই। তিনি হাসিমুখে বললেন, পহেলা বৈশাখে ইলিশ পান্তা খাবার মজাই আলাদা। দাম একটু বেশী হলেও বছরের প্রথম দিন সবাইকে নিয়ে পান্তাভাব খাবো এটাই শান্তনা। একজন বিক্রেতা জানালেন, সামনে দাম আরো বাড়বে। এজন্য এখনই ভালো ইলিশ বাজারে উঠেনি। যা বিক্রি হচ্ছে সবই ফ্রিজআপ করা। এছাড়াও রাজধানীর সোয়ারীঘাট, আব্দুল্লাহপুর, মুগদা বাজারসহ যাত্রাবাড়ি আড়তেও ইলিশের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। যাত্রাবাড়ি আড়তের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানালেন, এবার পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে রাজধানীতে ২০ কোটি টাকার ইলিশ মাছ বিক্রি হবে। ইতোমধ্যে ৫ কোটি টাকার বিক্রি হয়ে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে চাঁদপুর থেকে ইলিশ মাছ এনে আগেই স্টোরে মজুদ রাখা হয়েছে। এখন ছোট সাইজের ইলিশে রাজধানীর পাড়া মহল্লা বলতে গেলে সয়লাব। কিন্তু কিনতে গেলেই চক্ষু চড়কগাছ। আর মাঝারী সাইজের ইলিশ পাওয়া যায় বাজারে। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতেই ইলিশের দাম বাড়ানো হচ্ছে প্রতিদিন। প্রচুর যোগান থাকলেও দাম বাড়ানোর জন্যই মজুতদাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে ইলিশের। এরই মধ্যে কয়েকটি দোকানে দেখা মিলছে ইলিশের। মাছের আকার আর প্রকারভেদে দামও আলাদা। বড় সাইজের একটি ইলিশের দাম ধরা হচ্ছে ৩ হাজার টাকারও বেশি, তুলনায় ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ থেকে দেড় হাজার টাকায়।
পরিবারের চাওয়া, ইলিশ থাকতেই হবে বৈশাখি উৎসবে। তাই দামের দিকে না তাকিয়েই সাধ্যমতো মাছ কিনছেন ক্রেতারা। বাঙালির চেতনায় পহেলা বৈশাখকে ঘিরে একদিকে যেমন পান্তা ইলিশের ধুম, তেমনি বিক্রেতারাও যেন দাম হাঁকানোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে।