নতুনের কেতন উড়িয়ে আবার এলো বৈশাখঃ স্বাগতম ১৪২১
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: নতুনের কেতন উড়িয়ে আবার এলো বৈশাখ। বাঙালীর নববর্ষ। এর সঙ্গে বিদায় হলো ঘটনাবহুল আরও একটি বছরের। পহেলা বৈশাখ আবহমানকাল ধরে বাঙালীর প্রিয় দিন। আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রভাত নতুন প্রাণের বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছে বাঙালীর ঘরে ঘরে। ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে দেশজুড়ে আজ মানুষের ঘরে ঘরে জেগেছে নতুন প্রাণের স্পন্দন। বিগত রাতের সঙ্গে সঙ্গে কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে একটি বছর। আজ শুরু হলো নতুন আশা ও উদ্দীপনার নতুন বছর। নতুন বছর সবার জন্য মঙ্গলময় হয়ে উঠুক এই প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। আবহমান কাল ধরে এই নববর্ষ বাঙালীর জীবন-সংস্কৃতির অঙ্গ।
বাঙালীর মনপ্রাণজুড়ে রয়েছে বাংলা নববর্ষ। এ দেশের কৃষক-শ্রমিক, জেলে-তাঁতি, কামার-কুমারসহ নানা পেশার মানুষ যুগ যুগ ধরে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে আসছে আনন্দ-উৎসব আয়োজনের মধ্য দিয়ে। ব্যবসায়ীরা এখনও হিসাবের নতুন খাতা-হালখাতা খোলেন বৈশাখের প্রথম দিনে। এ জন্য মিষ্টান্নেরও আয়োজন থাকে। নববর্ষ উপলক্ষে দেশে গ্রামগঞ্জে নদীর পাড়ে, খোলা মাঠে কিংবা বটগাছের ছায়ায় মেলার আয়োজন করা হয়। দোকানিরা মুড়ি, মুড়কি, পুতুল, খেলনা, মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, বাঁশিসহ বাঁশ-বেত-কাঠ-মাটির তৈরি বিভিন্ন পসরা নিয়ে বসেন। নাগরিক জীবনেও নববর্ষের আবেদন কম নয়। ছায়ানটের উদ্যোগে রমনার বটমূলে বৈশাখের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈশাখ বরণ উৎসব শুরু হয় মহাসমারোহে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার উদ্যোগে বৈশাখী র্যা লির আয়োজন করা হয়। রঙবেরঙের মুখোশ পরে নানা সাজে সজ্জিত হয়ে র্যা লিতে অংশ নেয় সকল শ্রেণীর মানুষ। সকাল না হতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি চত্বরসহ গোটা রমনা অঞ্চল মুখরিত হয়ে ওঠে। বৈশাখ উপলক্ষে ফ্যাশন হাউসগুলোতেও থাকে নানা আয়োজন। পত্রিকাগুলো বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ইলেকট্রনিক মিডিয়াও বৈশাখের নানা আয়োজনে ব্যস্ত থাকে। এভাবে বৈশাখ আসে আমাদের প্রাণের উৎসব হয়ে। আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে এটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাংলা সনের উৎপত্তির সঙ্গে জীবনধারা এবং প্রকৃতির অবস্থার সঙ্গে জড়িত থাকলেও খাজনা আদায়ের বিষয়টি সব ধর্মের সব মানুষই নববর্ষ উৎসব বাঙালীর চিন্তা-চেতনার সঙ্গে মিশে গেছে। এটা এমন একটা উৎসব যাকে সর্বজনীনভাবে প্রাণের আনন্দে বরণ করে নেয়। বাংলা নববর্ষ অ-সুর দূর করে সুর সঙ্গীতের, মেলা ও মিলনের আনন্দ ও উৎসবের, সাহস ও সঙ্কল্পের প্রেরণা জোগায়। দুঃখ-গ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেয়ার দিনও পহেলা বৈশাখ। দেশের কল্যাণে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অগ্নিশপথ নেয়ার দিনও এটি। কবির ভাষায়, ‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেও বৈশাখের চেতনায় উজ্জীবিত হতে হবে। সবাইকে নববর্ষের শুভেচ্ছা। স্বাগতম ১৪২১।
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।