সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পিএসসিকে পাশ কাটিয়ে সিএনএস নিয়োগের চেষ্টা
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ সরকারি কর্ম কমিশনকে (পিএসসি) পাশ কাটিয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার (সিএনএস) পদটি পূরণের প্রক্রিয়া চলছে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নেতিবাচক মতামত থাকা সত্ত্বেও অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা তথ্য গোপন করে সিএনএস হিসেবে পদোন্নতি পেতে জোর তদবির চালাচ্ছেন। নৌ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা তাঁকে সহায়তা করছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়, পিএসসি ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুগ্মসচিব মর্যাদার গুরুত্বপূর্ণ পদটি পিএসসির মাধ্যমে পূরণ না করা হলে যোগ্যতাসম্পন্ন নৌ-প্রকৌশলীরা মেধা-প্রতিযোগীতায় অংশগ্রণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। এছাড়া চাকরিরত কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে সিএনএস পদে স্থায়ী করাটা তাঁদের প্রতি এক ধরনের অবিচার বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। সূত্র মতে, পদোন্নতি প্রত্যাশি কর্মকর্তা হলেন সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের (ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং-ডস) অঙ্গ সংস্থা নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের (মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট-এমএমডি) নটিক্যাল সার্ভেয়ার কে এম জসিম উদ্দীন সরকার। তিনি ডসের কর্মকর্তা না হয়েও দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিএনএস এর চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন।
এদিকে, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের অধীনে নিয়মিত অনুষ্ঠিত মাষ্টারশিপ পরীক্ষা গ্রহণে জসিমউদ্দীন সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর দু’জন দালালের মাধ্যমে প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়ে তাঁদের পাশ করানোর চাঞ্চল্যকর খবর দেশের শীর্ষস্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে ইতিপূর্বে বারবার প্রকাশিত হয়েছে। এসব ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং প্রভাবমুক্ত ও স্বচ্ছ তদন্তের স্বার্থে পরীক্ষা গ্রহণের কার্যক্রম থেকে তাঁকে সাময়িকভাবে প্রত্যাহারের জন্য সামাজিক সংগঠক ‘নৌ, সড়ক ও রেলখাত রক্ষা জাতীয় কমিটি’র পক্ষ থেকে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অনুরোধ জানানো হয়।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, জসিমউদ্দীন সরকার সিএনএস পদে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নৌ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু বিদ্যমান মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স (এমএসও)-১৯৮৩ এর সংশ্লিষ্ট নিয়োগ বিধি অনুযায়ী এই পদে তাঁর পদোন্নতির সুযোগ নেই। কারণ, সিএনএস পদটি সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের। আর জসিমউদ্দীন সরকার অধিদপ্তরের অঙ্গ সংস্থা নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের (এমএমডি) সার্ভেয়ার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) ২০০৮ সালে এই মর্মে এক চিঠিতে বিষয়টি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়) তৎকালীন সিনিয়র সহকারি সচিব রোকেয়া বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে নৌ-সচিবকে জানানো হয়, ‘‘বিদ্যমান নিয়োগ বিধিমালার তফসিলে ‘নটিক্যাল সার্ভেয়ার’ পদটি তফসিলভুক্ত না হওয়ায়র কারণে তফসিলভুক্ত ‘চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার’ পদে পদোন্নতির সুযোগ নেই।’’ (স্মারক নং সম(বিধি-২)-পদোন্নতি-৩০/০৮-২৬০ তারিখ: ২৪-০৭-২০০৮ ইং)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে সিএনএস পদে জসিমউদ্দীন সরকারের পদোন্নতি যেমন নিয়োগ বিধিমালার অন্তরায়, তেমনি চলতি দায়িত্ব পালনও বিদ্যমান বিধিমালার পরিপন্থী। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শপথ গ্রহণের মাত্র দু’দিন আগে ৪ জানুয়ারি তৎকালীন নৌ উপদেষ্টার সম্মতি ছাড়াই তৎকালীন নৌ-সচিব তাঁকে সিএনএস এর চলতি দায়িত্ব প্রদান করেছিলেন; যা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ।
সূত্র জানায়, বঞ্চিত প্রার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব এস এম আলী কবীরের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সরকারের কাছে দেয়া ঐ কমিটির রিপোর্টে সিএনএস পদে পরীক্ষা গ্রহণে নানা অসঙ্গতির তথ্য তুলে ধরা হয়। এরপর ২০০৭ সালে পিএসসি ওই বিতর্কিত পরীক্ষা বাতিল করে। পরবর্তী সময় ঐ পদে আবেদনপত্র চেয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পিএসসি। কিন্তু শুরুতেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অসঙ্গতি থাকায় ২০০৯ সালে ক্যাপ্টেন বায়োজিদ নামে এক নৌ-প্রকৌশলীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট সিএনএস নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ দেন; যা এখনো বহাল রয়েছে। এদিকে, পিএসসি ২০০৬ সালের পরীক্ষা বাতিল করলেও নৌ মন্ত্রণালয় ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে এক অফিস আদেশে সেই বিতর্কিত জসিমউদ্দীন সরকারকেই সিএনএস’র চলতি দায়িত্ব প্রদান করে। যতোদ্রুত সম্ভব পিএসসির মাধ্যমে পদটি পূরণসাপেক্ষে তাঁকে চলতি দায়িত্ব দেয়া হলেও দীর্ঘ পাঁচ বছর পরও পদটি শূন্য রয়েছে। এই সুযোগে বিতর্কিত কর্মকর্তা জসিম উদ্দীন সরকার চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে দীর্ঘ সময় সিএনএস’র দায়িত্ব পালনসহ সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করে চলেছেন বলে জানা যায়।