শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। তাতে উল্লেখ আছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ২০ বছরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ‘মায়ানমার, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া হাইতি, ভিয়েতনাম, ডমিনিকান ও পাকিস্তান’ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, সাইক্লোন ও টর্নেডোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জীবন-জীবিকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ২২ এপ্রিল বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর গেলরড নেলসন ১৯৭০ সালে ‘এনভায়রনমেন্টাল টিচ ইন’ নামে যে আন্দোলন শুরু করেছেন তাই আজকের ধরিত্রী দিবস। বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। আয়তনে ছোট হলেও প্রাকৃতিকভাবে জীববৈচিত্র্য খুবই সমৃদ্ধ। আর এ জনসংখ্যার চাপের মাঝে থেকে প্রকৃতিতে জীব ও তার সৌন্দর্য এখন হুমকির সম্মুখীন। বিশ্ব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার ডবিস্নউডবিস্নউএফ (ডডঋ) বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা প্রকাশ করেছে ১৯৭০ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ৩৫ বছরে ৩০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, যা আমাদের পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতি। প্রকাশনায় আরও বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেও আগামী ৩০ বছরে বিশ্বের অবস্থা আরও হুমকির পথে যাবে।
১৯৭০ সালে সিনেটর গেলরড সেলসনের আন্দোলনে প্রথম ২০ মিলিয়ন মানুষ অংশ নেয়। আর ২০১২ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি। দ্রুত যে হারে আন্দোলনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হারে অগ্রগতি হয়নি বিশ্ব ধরিত্রী দিবসের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকরা সম্প্রতি বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী গড়ে আট ঘণ্টায় প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ১০ হাজার মাইক্রোগ্রাম কার্বন মনোক্সাইড ১০০ মাইক্রোগ্রাম নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, ১ দশমিক ৫৭ মাইক্রোগ্রাম ওজন এবং গড়ে ২৪ ঘণ্টায় প্রতি ঘনমিটারে ৩৬৫ মাইক্রোগ্রাম সালফার ডাইঅক্সাইড গ্যাস সহনীয় হলেও পৃথিবীর জনবসতি এলাকায় এ হার অনেক উপরে। আগামী শতকে বিশ্বের তাপমাত্রা যেন দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সেজন্য ২০০৯ সালে ১৮৯টি দেশের সমন্বয়ে কোপেনহেগে সম্মেলন হয়। কিন্তু ১৮৬টি দেশের মধ্যে মাত্র ৪টি দেশ স্বাক্ষর না করায় তা বাধ্যতামূলক হয়নি। ওই সম্মেলনেও সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতি এবং পরিবেশের ওপর মানুষ, প্রাণী, উদ্ভিদ জগতের অস্তিত্ব নির্ভরশীল কিন্তু পুরো বিশ্বে নানা রকম বিপর্যয়ের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ওজন স্তর ক্ষয় হচ্ছে, জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে, অনিয়ন্ত্রিত জীব প্রযুক্তির ব্যবহার, সশস্ত্র যুদ্ধ ও সাময়িক মহড়া ইত্যাদি কারণে আজ এ অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করার কথা থাকলেও তা শুধু ঘোষণার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকে। সরকার দেশের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে সে অনুপাতে দেশে যন্ত্রপাতির খুব অভাব। আবার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার খবর জানাতেও যেসব কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন তাও যথেষ্ট পরিমাণে নেই। গত বছর মার্চ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার টর্নেডো যে হারে ক্ষতি করেছে তার জন্য আগেই আবহাওয়ার খবর জানা গেলে হয়তো এতগুলো প্রাণ নষ্ট হতো না। দিন দিন পৃথিবী হুমকির মুখে পড়ছে। বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি কার্বনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া। গ্যাস ছড়ানো দেশের তালিকায় ইদানীং উন্নত দেশগুলোর নামও চলে আসছে। ভূমিকম্পে ২০১০ সালে হাইতিতে মারা যায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ। বছরের এ মাথায় ওই মাথায় বাংলাদেশের দুর্যোগগুলো কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। পরিবেশ রক্ষায় আইন থাকলেও আমাদের বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগ কম। জাতীয় পরিবেশ নীতি ১৯৯২ বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ যা ২০১০ সালে সংশোধিত করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ পরিবেশ আদালত আইন ২০০০ যা ২০১০ সালে সংশোধিত করা হয়। অথচ বাস্তবে এর কোন ফলাফল পায় না দেশ ও জনগণ। ২০০২ সালে ঢাকায় সমগ্র বাংলাদেশের জন্য একটি পরিবেশ আপিল আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাতে লেখা থাকে ৩০ দিনের মধ্যে আপিল আদালতে আপিল করতে হবে। তবে এর সুফল মেলেনি।
[শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।]