ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট জীবন!
পুলক চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ প্রচণ্ড গরমে দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের জনজীবন। টানা ভ্যাপসা গরম আর অনাবৃষ্টির কারণে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হলকার মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই! শিশুরা ছাড়াও গরমে সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধরা। এদিকে গরমের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে শুরু হয়েছে অসহনীয় লোডশেডিং। বৈশাখের তীব্র গরম আর অসহনীয় তাপমাত্রার কারনে দিনের বেলায় শহরে লোকজনের চলাচল অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটাই কম। কর্মজীবী মানুষ বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে কান্ত হয়ে পড়ছেন। কান্তি দূর করতে কেউ পান করছেন ডাবের পানি, কেউবা খাচ্ছেন শসা। তাই প্রচন্ড গরমে তরমুজ,আনারস, ঠান্ডা পানী আর ডাবের বিক্রি বেড়ে গেছে বহুগুন। লাচ্ছি জুস আর কোমল পানীয়ের ব্যবসাও বেশ জমজমাট। রাজধানীর মোড়ে মোড়ে, ফুটপাতে খোলা জায়গায় ঠান্ডা পানির লেবুর শরবত,তরমুজ বিক্রি করছেন এক শ্রেনীর নিম্নবিত্ত মৌসুমী ব্যবসায়ী। পিপাসায় কাতর মানুষ রাস্তার ধারের এসব খাবার খেয়ে আবার অসুস্থও হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। গরমে এর সাথে যোগ হয়েছে ডায়রিয়া। হাসপাতালে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। বৈশাখ শুরুর ৯ দিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত বৃষ্টির দেখা মেলেনি। আবহাওয়া অধিদফতর সুত্রে জানা গেছে, আগামী তিন-চার দিনেও বৃষ্টির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এমনকি তাপমাত্রা আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বেশি। গত সোমবার ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ ঢাকার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
গত বছর এই এপ্রিল মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, ‘ঢাকার তাপমাত্রাও গত বছরের তুলনায় এবার বেশি। গত বছর এ সময় ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ জন্যই এত গরম পড়ছে।’ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ার কারণেই তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বৃষ্টি হলেই গরম কমে যাবে। চলতি মাসে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি বা দুটি লঘুচাপের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী সপ্তাহে কিছুটা বৃষ্টি হতে পারে। এদিকে অতিরিক্ত গরমের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বর, ডায়রিয়া হচ্ছে। এমন অবস্থা যে, ঘরে ঘরে জ্বরের রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এেেত্র শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিদিনই হাসপাতালগুলোতে পানিবাহিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রঞ্জন দেব, প্রচণ্ড এই গরমে সবাইকে প্রচুর পানি ও খাওয়ার স্যালাইন পানের পরামর্শ দিয়ে বলেন, সুস্থ থাকতে হলে রাস্তার ধারে ফুটপাতে খোলা জায়গায় বিক্রি করা, তরমুজ, শসা, আখের রস, আনারস, লেবুব শরবতসহ সব ধরনের খোলা পানীয় পান থেকে বিরত থাকতে হবে। গরমে বাইরের খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, ঘরের পরিবেশ যতটা সম্ভব ঠান্ডা রাখা গেলে ডায়রিয়া ও শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকবে। এছাড়া গরমে শিশুদের বেশ সাবধানে রাখতে হবে। রোদে যাতে বেশি ঘোরাঘুরি না করে তা দেখতে হবে। ঘেমে গেলে শরীর মুছে দিতে হবে। অধিক ঠান্ডা পানির পরিবর্তে স্বাভাবিক তাপমাত্রার অথবা হালকা ঠান্ডা পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি সুতির হালকা কাপড় পরতে হবে।