রাষ্ট্রয়ত্ব ৫ ব্যাংক থেকে অন্তত ১১শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ অসাধু ব্যবসায়ীদের একটি চক্র দেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিয়ে তা বিদেশ পাচার করে দিচ্ছে। এভাবে ওই চক্রের সদস্যরা ব্যাংকিং খাতের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। মূলত পণ্য আমদানির নামে ভুয়া এলসি খুলে এবং অস্তিত্বহীন প্রকল্পের মাধ্যমে অসাধু চক্রটি ব্যাংক থেকে মোটা অংকের ঋণ নিচ্ছে। এসব ঋণের জন্য দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে বেছে নিচ্ছে চক্রটি। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশ পাচারের ঘটনার সাথে ব্যাংকেরই এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত। আর পাচার করা অর্থের বেশিরভাগই মালয়েশিয়া, ব্যাংকক ও দুবাই চলে গেছে। বিদেশী বিনিয়োগ উন্মুক্ত করে দেয়ায় পাচারকারী টাকা পাচারে ওসব দেশকে বেছে নিচ্ছে। সেখানে আবাসিক ভবন, জমি কেনা, হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসায় এসব টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। তাছাড়া যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে ইংলিশ চ্যানেলের ছোট দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতেও অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অর্থপাচারকারীদের দেখাচ্ছে ঋণখেলাপি হিসাবে। বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে ঋণের প্রায় দেড় হাজার কোটি লোপাটের ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি অভিযোগের অনুসন্ধানও শেষ হয়েছে। ঋণ নিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা হাজার কোটি টাকা পাচারের সুযোগ করে দেয়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক থেকেও ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। ব্যাংকটির রমনা করপোরেট ও লোকাল অফিস থেকে ভুয়া কোম্পানির নামে ঋণ দেখিয়ে ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। অর্থপাচারকারী চক্রের কয়েকজন সদস্য রাষ্ট্রায়ত্ত ৫টি ব্যাংক থেকে অন্তত ১১শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশ চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে এমন একজনকে বিদেশীকে ঋণ দেয়া হয়েছে যার কোনো হদিসই পাওয়া যাচ্ছে না। জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট না নিয়েই ওই বিদেশীর নামে অনিয়ম ঋণপত্র দেখানো হয়। আর প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর পিএডি দায় সৃষ্টি করা হয়। ঋণের এই পুরো টাকাই বিদেশ পাচার হয়ে গেছে। তাছাড়া ফরেন বিল পারচেজ নেগোসিয়েশনের নামে বিদেশে পণ্য পাচার, গ্রাহকের সাথে ব্যাংক শাখা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে অনিয়মিত এলসির মাধ্যমে ফোর্সড লোন সৃষ্টি করে সোনালী ব্যাংকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। একইভাবে অপর্যাপ্ত জামানতের বিপরীতে অতিরিক্ত ঋণ সৃষ্টি করে ব্যাংকটির বিপুল অংকের টাকা ঝুকিপূর্ণ দায় সৃষ্টি করা হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের তথ্যানুযায়ী, গত এক দশকে বছরে গড়ে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা বিদেশ পাচার হয়েছে। ব্যাংক ঋণের নামেই বেশির ভাগ অর্থ পাচার হয়েছে। প্রতি বছর নামে-বেনামে যে পরিমাণ অর্থ এদেশ থেকে পাচার হচ্ছে, তা ছোট এদেশের অর্থনীতির জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। ব্যাংক ঋণের টাকা বিদেশ পাচার প্রসঙ্গে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। ভুয়া এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে এটা ঠিক কিন্তু ব্যাংকের এলসি বিল পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু শিপমেন্ট কিভাবে হলো বা এটা আদৌ হয়েছে কিনা তা সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। যদিও এ ধরনের পর্যবেক্ষণ খুবই জটিল। পুলিশি ব্যবস্থায় এ জালিয়াতি বন্ধ করা যাবে না।