চিকিৎসকদের দু’হাতে টাকা কামানোর প্রধান উৎস প্রাইভেট প্র্যাকটিস

চিকিৎসকদের দু’হাতে টাকা কামানোর প্রধান উৎস প্রাইভেট প্র্যাকটিস

বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ রাজধানী ঢাকার সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের আয়ের প্রধান উৎস প্রাইভেট প্র্যাকটিস। শতকরা ৯৮ ভাগ চিকিৎসকই কোন ও না কোন ক্লিনিক কিংবা প্রাইভেট চেম্বারে প্র্যাকটিস করেন। রোগী প্রতি ফিও নেন হাজার টাকা। সরকারি হাসপাতালে তড়িঘড়ি রোগী দেখেই ছোটেন প্রাইভেট চেম্বারে। সরকারি হাসপাতাল থেকে বেরিয়েই দু’হাতে টাকা কামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের ৭০ জন চিকিৎকের মধ্যে ৫৬ জনই প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। এসব চিকিৎসক প্রাইভেট চেম্বার ছাড়াও নগরীর মেডিনোভা, কমফোর্ট, মডার্ণ, স্কয়ারসহ বড় বড় ক্লিনিকে প্র্যাকটিস করেন। একই দৃশ্য দেখা গেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখান চিকিৎসকদের শতকরা ৯০ ভাগই হাসপাতালের বাইরে বেসরকারি ক্লিনিকে প্র্যাকটিসে ব্যস্ত সময় পার করেন। এখানকার ১৬ জন চিকিৎসকই বিকেলে বসেন কমফোর্ড হাসপাতালে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার কোনো কোনো চিকিৎসক একদিনে প্রায় শ’ খানেক রোগী দেখেন। রোগী দেখতে দেখতে রাত ভোর হয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে রোগী না দেখে নিজ চেম্বারে রেফার্ড করেন। এসব চিকিৎসকরা নিজ চেম্বারে রোগী দেখার লোভে ঢাকা ছাড়তে চান না। এমনকি ঢাকার বাইরে বদলী হলে আবার ফিরে আসতে না পারলে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেন না অনেকে। বিধি অনুযায়ী যত থাকা উচিত তার চারগুন বেশি চিকিৎসক ঢাকা জেলায় থাকে। বেসরকারী সংস্থা উবিনীগের এক গবেষনা থেকে জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মাত্র ১৭ শতাংশ চিকিৎসক উপস্থিত থাকেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ,খুলনা ও রাজশাহী মেট্টোপলিটন এলাকায় দেশের সাড়ে ১৪ শতাংশ মানুষের বাস হলেও সরকারি চাকরিরত ৩৫ শতাংশ চিকিৎসক এসব এলাকায় থাকেন। স্বাস্থ্য আন্দোলন ও সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভোলেপপমেন্ট এজেন্সি (সিড) এর এক তথ্যে থেকে জানা যায়, দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্রের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার মানও পড়ে গেছে। সেই সাথে এসব প্রতিষ্ঠানে রোগী আসার হারও কমে গেছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা থেকে জানা যায়, বিশ্বের প্রায় একশ’ কোটি মানুষ যে কোন ধরণের স্বাস্থ্য সেবা ব্যয় বহনে অপারগ। পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে প্রতি বছর প্রায় ১০ কেটি লোক দরিদ্র হয়ে পড়ছে। সূত্র জানায়, স্কয়ার হাসপাতালের শতকরা ৯৮ ভাগ রোগীই  উচ্চবিত্ত শ্রেণীর। রোগীদের সাথে কথা বলে যে হিসেব পাওয়া গেছে, তাতে বলা যায়,  প্রথম দফা চিকিৎসায় একজন রোগীকে গড়ে এগারো হাজার টাকা খরচ করতে হয়। পরে তা লাখের ঘরও ছাড়িয়ে যায়। এ হাসপাতালের এক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ নাম না ছাপানোর অনুরোধ করে বলেন, এখানে যে সুচিকিৎসা হয়, সে তুলনায় ব্যয় খুব একটা বেশি নয়। তিনি চিকিৎসকের প্রথমবারের ফি ৮‘শ টাকা। দ্বিতীয় বার ৪‘শ টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে ,বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর যে লাখ লাখ রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায় তার অন্যতম কারণ বাংলাদেশের চিকিৎসকদের উচ্চ ফি।

বিশেষ প্রতিনিধি