নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ তামাকজাত পণ্য ব্যবহারে বাংলাদেশেই প্রতিঘন্টায় ১৩৭ জন মানুষ তামাকজনিত ৮টি কঠিন রোগের (ফুসফুস ও মুখগহব্বরের ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, যা, ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদী রোগ ইত্যাদি) যে কোন একটি বা একাধিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশে প্রতিদিন ৩২৮৮ জন এসব ভয়াবহ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা করাতে প্রতিঘন্টায় ১৩৭টি পরিবার অর্থনৈতিকভাবে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাছাড়া তামাকজনিত রোগে এসব ভয়াবহ, জটিল, ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা উৎপাদন তথা উপার্জন ক্ষমতা হারাচ্ছেন। উৎপাদন মতা হারানোয় জাতীয় উৎপাদনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। উপার্জন ক্ষমতা হারানোয় পরিবার একই সঙ্গে দু’রকমের সমস্যায় পড়ে। এক. সংশ্লিষ্ট আক্রান্ত ব্যক্তির উপার্জন বন্ধ ও চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ। এছাড়া প্রতিদিন দেশে ১৫৬জন মানুষ তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তাই ক্ষতিকর তামাকের ব্যবহার কমাতে উচ্চহারে কর আরোপের যৌক্তিকতা অস্বীকার করার উপায় নেই।
৩০ মে (শুক্রবার) সকাল সাড়ে ১০টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট আয়োজিত সেমিনারে দেশের বিশিষ্ট জনেরা উপরোক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। রায়েরবাজারস্থ ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর সম্মেলন কে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় যক্ষা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এর সিনিয়র সভাপতি ও আন্তর্জাতিক সংগঠন দি ইউনিয়ন এর দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলের সভাপতি জনাব মোজাফফর হোসেন পল্টু। এতে প্রধান আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ড. এম মোস্তফা জামান। আলোচনা করেন ইউনাইটেড ফোরাম এগেইনেস্ট টোব্যাকো’র সাংগঠনিক সম্পাদক ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এন্ড হসপিটাল এর অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, দি ইউনিয়নের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শক ইসরাত চৌধুরী, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী আমিনুল আহসান, র্যাব-৪ এর ‘ল অফিসার ও ম্যাজিস্ট্রেট’ মোহাম্মদ আল-আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের সেক্রেটারি জেনারেল ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদ। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট নির্বাহী সদস্য বিধান চন্দ্র পাল এর সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল ক্যান্সার এ্যাম্বাসেডর ফর বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর নিয়মিত প্রকাশনা সমস্বর এর নির্বাহী সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সুজন। ড. মোস্তফা জামান বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) স্বার ও অনুস্বার (র্যাটিফাই) করেছে বাংলাদেশ সরকার যথাক্রমে ২০০৩ ও ২০০৪ সালে। তাই এ চুক্তির শর্তাবলী মানতে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এফসিটিসির আর্টিকেল ৬-এ করবৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, তামাক হচ্ছে মানবদেহের জন্য সবচেয়ে তিকর একটি নেশাজাত দ্রব্য। এর ফলে শরীরের পায়ের আঙুল থেকে মাথার চুল, সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তিগ্রস্ত হয়। ক্যান্সার, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস, এজমা ইত্যাদি কঠিন রোগের কারণে মানুষ ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। মানুষের মৃত্যু কমাতে তামাকজাত দ্রব্যের উপর কর বাড়াতে হবে। ইশরাত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সবচাইতে কম দামে তামাক বিক্রি হয়। এজন্য তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার বাড়ছে। তরুণদের তামাক থেকে নিরুৎসাহিত করতে তামাকের উপর উচ্চহারে কর আরো করতে হবে। আমিন উল আহসান বলেন, সরকার সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের আলোকে শীঘ্রই তামাক নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা পাস করবে। বিধিমালা পাস হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন আরও কার্যকর হবে। মোহাম্মদ আল আমীন বলেন, তামাক কোম্পানিগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তারা যেন আইন লঙ্ঘণ করে কোনরকম প্রচারণা চালাতে না পারে।
হেলাল আহমেদ বলেন, তরুণ প্রজন্ম তামাকের নেশার মাধ্যমে অন্যান্য মাদকের নেশার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তাই তামাকের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে তামাকের মূল্য বাড়াতে হবে। পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মকে খেলাধুলায় উৎসাহী করে তুলতে হবে। মুক্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান ইবনুল সাইদ রানা, মানবিক এর উপদেষ্টা রফিকুল ইসলাম মিলন, স্কোপ এর নির্বাহী পরিচালক কাজী এনায়েত হোসেন প্রমুখ।