আজ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী

আজ বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ আজ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন। এ বাজেটের আকার হচ্ছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) জন্য বরাদ্দ থাকছে ৮৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৬৭ হাজার কোটি টাকা। যা রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি, কমাতে হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছর রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে সে ক্ষত সারিয়ে উঠানোর চেষ্টাও থাকবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে যে উদ্যোগ দরকার সে পরিকল্পনার পথ নকশাও থাকছে বাজেটে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাজেটের রাজস্ব আয় হিসাবে আসবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেটের ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকা ব্যাংক ব্যবস্থাসহ মোট ৪৯ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে। বাকি ১৮ হাজার ৬৮ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক ঋণ হিসেবে। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাসহ নানা কারণে এবারের এডিপি বাস্তবায়ন কম হয়েছে। ফলে চলতি অর্থবছরের শেষ সময়ে তা সংশোধন করে মূল বাজেটের আকার নামিয়ে আনা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ২২২ কোটি টাকায়। এ কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের কম বাস্তবায়ন হওয়া এডিপি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা থাকবে এ বাজেট। মূলত ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আস্থা ফেরানোর জন্যই সরকারের এ উদ্যোগ।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ইব্রাহিম খালেদ মনে করেন, সরকারের এসব উদ্যোগের উদ্দেশ্যই হলো বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে মনোযোগী করা। তিনি সংবাদকে বলেন, এসব বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হলে বিনিয়োগের জন্য দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে। এতে ব্যবসায়ীরা অনুপ্রাণিত হবে। পাশাপাশি কপোরেট ট্যাক্স কমানোসহ আরও যেসব উদ্যোগের কথা শোনা যাচ্ছে সেখানেও বিনিয়োকারীদের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক হতে পারে। আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা টাকার সর্বোচ্চ বরাদ্দ থাকছে পরিবহন খাতে। সড়ক পরিবহন, সেতু ও রেলওয়ে, নৌ বেসামরিক বিমান পরিবহন মিলে আগামী বছরের জন্য ১৮ হাজার ৯৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। যা মোট এডিপির প্রায় ২৩ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে হচ্ছে ৯ হাজার ২৭৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। যা মোট এডিপির প্রায় ১২ শতাংশ। মূলত অর্থনীতিতে অর্থের সঞ্চালন অব্যাহত রাখার মধ্যে দিয়ে সরকারের বিনিয়োগ চাঙ্গা রাখতে ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের অগ্রগতি ধরে রাখার মধ্য দিয়ে সরকারের শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ অব্যাহত রাখতেই সরকারের উদ্যোগ। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি বলেন, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবারহে সরকার যা যা করণীয় তা করবে। আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৭.২ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে ৬.১২ শতাংশ। বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার মতে এ পরিমাণ আরও কম। চলতি অর্থবছর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। দেশব্যাপী নজিরবিহীন নাশকতায় তা পূরণ হয়নি। তাই চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা সংশোধিত এ লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তা সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে ১৫ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা ও সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৬ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা বেশি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই এবার করপোরেট ট্যাক্স কমানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে এ হার ছিল ৪২ শতাংশ। আগামী বছরে তা কমিয়ে ৩৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হচ্ছে। আগামী বছরে বেশ কিছু পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক তুলে নেয়া হবে। সম্পূরক শুল্কও সমন্বয় করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ কমবে। তবে বৃদ্ধি করা হচ্ছে ভ্যাটের পরিধি। এর মাধ্যমে তুলে নেয়া হবে বাড়তি খরচ। এবার ৩২টি পণ্যের ওপর করের বোঝা বাড়ানো হবে। চলতি বছরে ৫০৪টি পণ্যের ওপর ভ্যাট ছিল। এবার তা হবে ৫৩৬টি। মূলত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের জন্য নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের জন্যই সরকার আগামী বছর করের এ পরিধি বৃদ্ধি করছে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়বে। বাড়ি ভাড়া থেকে সরকার রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে আগামী বাজেটে। এজন্য লক্ষাধিক বাড়ি চিহ্নিতও করেছে রাজস্ব বোর্ড। আগামী অর্থবছরে ব্যাংকের মাধ্যমে এসব বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে দেশি ঋণের পাশাপাশি বিদেশি বিভিন্ন উৎস থেকেও ঋণ নিতে হয় সরকারকে। নতুন অর্থবছরের ঘাটতি মেটাতে ২৬ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী। সেখান থেকে আবার ৮ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে আগে থেকে নেয়া বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ করতে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে নতুন অর্থবছরের ঘাটতি অর্থায়ন করতে নিট ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ আশা করছেন অর্থমন্ত্রী। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে বিদেশি উৎস থেকে ২৩ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশি ঋণ না পাওয়ায় তা কমিয়ে ২১ হাজার ৫৮ কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কিন্তু আগামী বছর কতটা অর্জিত হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। বৈদেশিক উৎস থেকে প্রত্যাশা অনুযায়ী অর্থ না এলে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া সরকারের ঋণের পরিমাণ বাড়বে। এতে বেসরকারি বিনিয়োগ ব্যাহত হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিনিধি