সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর এখন অনিয়ম ও দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য
কাজী মাহফুজুর রহমান শুভ,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরে (ডিজি শিপিং হিসেবে পরিচিত) নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় দু-একজন কর্মকর্তা ফ্রি-স্টাইলে দুর্নীতি করে চলেছেন। আর এই অভিযোগ উঠেছে দু’জন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে। তাঁদের একজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তসহ ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) লিখিত অভিযোগ করেছেন একজন মাষ্টার মেরিনার। অভিযোগের অনুলিপি সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর অভিযোগ, সরকারি বিধি অনুযায়ী এ দুই কর্মকর্তার চাকরি এখনো স্থায়ী না হলেও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশীর্বাদে তাঁরা অবৈধ অর্থ উপার্জনের নেশায় মেতে উঠেছেন। ভাগ্যবান এ দুই কর্মকর্তার একজন হলেন- ‘নটিক্যাল সার্ভেয়ার এন্ড এক্সামিনার’ ক্যাপ্টেন এম গিয়াসউদ্দিন। তাঁর বিরুদ্ধে স্বল্পতম সময়ে সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে বলে দুদক ও এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর লেখা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে তাঁর অবৈধ আয়ের প্রধান কয়েকটি উৎস সম্পর্কে জানা গেছে। সেগুলো হচ্ছে- অভ্যন্তরীণ জাহাজের মাষ্টারশিপ পরীক্ষা, সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের ‘ডেক সনদ’ পরীক্ষা ও মেরিন ফিশারিজ ক্যাডেটদের পরীক্ষা গ্রহণ, নাবিকদের আইডি কার্ড প্রদান এবং বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (মেরিন একাডেমি) পরিদর্শন। এসব পরীক্ষায় জনপ্রতি ৬০ হাজার থেকে তিন লাখ এবং একাডেমি পরিদর্শনে এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। অভিযুক্ত অপর কর্মকর্তা হলেন- ‘ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার’ মির্জা সাইফুর রহমান। তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে দুদক ও এনবিআরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন দুই কর্মকর্তার প্রত্যক্ষ মদদে ক্যাপ্টেন এম গিয়াসউদ্দিন ও মির্জা সাইফুর রহমান একাধিক সিনিয়র সহকর্মী নৌ-স্থপতির পেছনে সব সময় লেগে থাকেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন এম গিয়াসউদ্দিন ‘ধরাকে সরা জ্ঞান’ করে ফ্রি-স্টাইলে অনিয়ম-দুর্নীতি করে চলেছেন। এখন তিনি চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ারের (সিএনএস) চলতি দায়িত্ব পাওয়ার আশায় ওপর মহলে জোর তদবির শুরু করেছেন। তবে, গোপালগঞ্জের লোক হিসেবে বর্তমান সরকারের আমলে কর্ম-অভিজ্ঞতার জাল কাগজপত্র জমা দিয়ে বিশেষ মহলের প্রভাবে পিএসসির মাধ্যমে চাকরি পেলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি জামাত-ঘরানার লোক। তাঁর এক ‘ভায়রা ভাই’ জামাতি প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের বড় কর্মকর্তা এবং স্ত্রীর বড় ভাই ঢাকা মহানগর জামাত-শিবিরের হার্ট-কোরের সদস্য। এর প্রমাণ হচ্ছে- গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে জামাত-শিবিরের ক্যাডার হিসেবে মহানগর পুলিশ তাঁকে গ্রেফপ্তার করেছিল। জামাত-শিবিরের এই ক্যাডারকে (স্ত্রীর বড় ভাই) নিয়ে ক্যাপ্টেন গিয়াস প্রায়ই পুরানা পল্টনের একটি গণমাধ্যম অফিসে যাতায়াত করেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ জাহাজের মাষ্টারশিপ পরীক্ষায় জনপ্রতি শ্রেণীভেদে (প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়) ৬০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন গিয়াস। এভাবে প্রতিমাসে অনুষ্ঠিত এই পরীক্ষায় অযোগ্য ১০-১২ জনকে পাস করিয়ে থাকেন তিনি। গত তিনটি পরীক্ষায় প্রধান পরীক্ষক ও অধিদপ্তরের সিএনএস ক্যাপ্টেন জসিমউদ্দীন সরকার অনুপস্থিত থাকায় এর প্রায় দ্বিগুন পরীক্ষার্থীকে পাস করানো হয়েছে। সূত্র মতে, জাহাজের নাবিকদের (ডেক অফিসার) ‘ডেক সনদ’ পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য নেয়া হয় জনপ্রতি এক থেকে দুই লাখ টাকা। জনপ্রতি দেড় লাখ থেকে তিন লাখ টাকা নেয়া হয় সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের আইডি পরীক্ষায়। মেরিন ফিশারিজ ক্যাডেটদের পরীক্ষায় পাস করানোর জন্য প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে থাকেন গিয়াসউদ্দিন। বেসকারি প্রতিটি মেরিন একাডেমি পরিদর্শনবাবদ এক লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে সেখানে শিক্ষা কোর্স চালুর পক্ষে মতামত দেয়া হয়। তবে, এই উৎকোচ দিয়ে থাকে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো। আর এভাবে প্রতিমাসে ক্যাপ্টেন গিয়াস অন্তত ২৫ লাখ টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করে থাকেন। এ বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেলেই সব সত্যি হয় না। সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য থাকলে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন করুন। অযথা ফালতু প্রশ্ন করবেন না।