আধেক চেনা…
দেয়ালের এধারে বাতাবীনেবুর গাছ আর ওধারে গন্ধরাজ। দুটো বাড়ীর সব ভালোমন্দ ওদের জানা হয়ে গেছে। আজ বাবুনের জ্বর বাতাবী জানিয়ে দিতেই গন্ধরাজ বাবলিকে জানিয়ে দিলো। আবার বাবলির মন ভালো নেই সে কথাটুকুও পৌঁছে গ্যাছে বাবুনের কানে। বাবুন আর বাবলির ঝগড়াও হয়। তখন দুটি গাছের কত্ত বাহানা তৈরী করতে হয়! মাঝে মাঝে গন্ধরাজ বলে, “ভালোবাসলে এতোখানি?”……..বাতাবী হেসেই মরে আর কী! প্রশ্ন করে, “কত্তখানি?” গন্ধরাজ হেসে ওঠে আহ্লাদে বলে, “জানিনা যাও…” বাতাবীর প্রশ্ন এখানেই থেমে থাকেনা। থেমে থাকেনা বাবুন ও বাবলি। শুধু মাঝের দেয়ালটা বেড়ে ওঠে তাজিং ডং ঢঙে। দেখা হয়না ,কথা হয়না এমনকী ভুলও হয়না। বাবলি বলে,”জানিস তো প্রেম আর জীবন এক নয় । স্বপ্নিল প্রতিষ্ঠিত আর এমন দু’চার কথা ছেলেবেলায় হয়েই থাকে।” বাবুনও কম কী! শ্রুতির খোঁপায় গন্ধহীন গোলাপ গুঁজতে গুঁজতে বলে,”জানোই তো বাল্যপ্রেমে অভিশাপ থাকে। প্রেম তো বোঝার পাঠ ,তাইতো দেরীই হলো পথে………………….” বাতাবী এখনও গন্ধ বিলোয়। ফুলে ফলে সরস হয়। গন্ধরাজও তার ফুলে ফুলে ভরে ওঠা তনুখানির আমন্ত্রণ বাতাসের কানে পৌঁছে দিয়ে বলে,”ওকে বলিস একদিন দেয়ালে শ্যাওলা জাগবে, একদিন ভেঙে যাবে নিষেধের ধোঁকা।”
গতকাল বিকালে বাবলির সাথে বাবুনের দেখা। বাবলির পরণে সাদাশাড়ী। বাবুনের বুকের পাঁজরে কীসের ধোঁয়া! কেনই বা? বাবুন এগিয়ে আসে, বাবলিও খানিকটা যায়। দুটো সাদা রঙের দু’রকম গাছ। অথচ দেয়ালটা কখনও বোঝেনি কিছু শক্তি একেবারেই রঙিন ফানুস। কিছু দেনা ভীষণ গভীর । রয়ে যায় আধেক চেনা……আনাচে-কানাচে…
[কাজরী তিথি জামান: প্রাবন্ধিক]