জাতিসংঘে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছেঃ প্রধানমন্ত্রী
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে তাঁর যোগদান এবং যুক্তরাষ্ট্র সফর সব দিক থেকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে। তিনি বলেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বাংলাদেশকে রোল মডেল হিসেবে আবারও স্বীকৃতি দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে ধারাবাহিক দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এটাই ছিল তার প্রথম সফর। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী প্রতিবারের মত এবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেন। ৩ অক্টোবর (শুক্রবার) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে যোগদান এবং যুক্তরাষ্ট্র সফরের ওপর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর বিতর্কিত বক্তব্যের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অবিবেচকের মতো কথা বললে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না। এর বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। লতিফ সিদ্দিকীর ব্ক্তব্যে সরকার বেকায়দায় পড়েনি। উনি নিজেই বেকায়দায় পড়েছেন। এতে সরকারের বিপদের কোনো কারণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, লতিফ সিদ্দিকীর বক্তব্যের ব্যাপারে তিনি যখনই জানতে পেরেছেন, তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেননি। এ-সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অফিস খুললেই লতিফ সিদ্দিকীর অব্যাহতি-সংক্রান্ত ফাইল রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে পাঠানো হবে। লতিফ সিদ্দিকীর দলীয় পদের ব্যাপারে দলের সভাপতিমণ্ডলী আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেবেন। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখন আগ্রহ দেখালাম তখন কোনো খবর ছিল না। এখন কার সঙ্গে আলোচনা করবো?’ তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ ও হত্যাকারীদের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৭ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৪০ বছর পূর্ণ হয়। এ উপলক্ষে ২৬ সেপ্টেম্বর বিকেলে জাতিসংঘ সদর দফতরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ অনুষ্ঠানে জাতসিংঘ মহাসচিব বান কি মুন, নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং ইউএনডিপির প্রশাসক হেলেন ক্লার্ক, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আমিরা হক, ইউনেসকোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভাসহ ভারত, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তারা বিশ্বশান্তি, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ দমন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের দৃশ্যমান ও নেতৃস্থানীয় ভূমিকার প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনা গত ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ সময় জাতিসংঘ মহাসচিব গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভ-এর অন্যতম চ্যাম্পিয়ন সরকার প্রধান হিসেবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারী ও শিক্ষা ও কন্যা শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে আমার নেতৃস্থানীয় ভূমিকার ভুয়সী প্রশংসা করেন। জাতিসংঘ প্রধান শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সম্প্রতি বাংলাদেশের শীর্ষস্থান অর্জন করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান এবং শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে বাংলাদেশের র্যাপিড ডেপ্লয়মেন্ট-এর প্রশংসা করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পরবর্তী সময়ে দেশে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য শেখ হাসিনার সরকারকে অভিনন্দন জানান। শেখ হাসিনা বলেন, এবার জাতিসংঘে বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। এমডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এসব সাফল্য অর্জনে জাতিসংঘে বাংলাদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়ে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিনিয়োগ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিনিয়োগবান্ধব দেশ গড়তে উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশ সরকারের পাশে থাকার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক যান প্রধানমন্ত্রী। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অধিবেশনে ভাষণ দেন তিনি। জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি বেশ কিছু উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকেও যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া, জাতিসংঘ মহাসচিব বান-কি-মুন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে ২৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের উদ্দেশে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন তিনি। যুক্তরাজ্যে দু’দিনের ব্যক্তিগত সফর শেষে ১ অক্টোবর লন্ডন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করেন প্রধানমন্ত্রী। ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফেরেন তিনি।