আবারও বাড়ছে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। উৎপাদন পর্যায়ে ইউনিট প্রতি ৮১ পয়সা বাড়ানো প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। আর গ্যাসের দাম বাড়াতে চলতি মাসেই পেট্রোবাংলা প্রস্তাব পাঠাবে বিইআরসিতে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব ধরনের গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব ইতোমধ্যে পেট্রোবাংলাতে পাঠিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এখন পেট্রোবাংলা এই প্রস্তাব বিইআরসিতে জমা দেবে। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে আবাসিক খাতে দুই চুলার বর্তমান দাম ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার টাকা এবং এক চুলা ৪০০ টাকা থেকে ৮৫০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক হাজার ঘনফুট গ্যাসের বর্তমান দাম ১১৮ টাকা ২৬ পয়সা থেকে ২৪০ টাকা করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সিএনজির প্রতি এক হাজার ঘনফুটের বর্তমান দাম ৮৪৯ টাকা ৫০ পয়সা থেকে এক হাজার ১৩২ টাকা ৬৭ পয়সা এবং সার কারখানায় ৭২ টাকা ৯২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। আবাসিকে মিটারের ক্ষেত্রে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য ১৪৬ টাকা ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২৩৫ টাকা করা হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জন্য ৭৯ টাকা ৮২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৪ টাকা, বাণিজ্যিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ২৬৮ টাকা ০৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ টাকা, শিল্প গ্রাহকদের ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২২০ টাকা, চা বাগানের ক্ষেত্রে ১৬৫ টাকা ৯১ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২০০ টাকা। এখন এই প্রস্তাব গণশুনানিসহ সকাল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেবে বিইআরসি।
এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর বলেন, দেশে গ্যাসের সংকট আছে। আর এ সংকট মেটাতে তরল গ্যাস আমাদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যখন তরল গ্যাস আমদানি শুরু হবে তখন গ্যাসের দাম বেড়ে যাবে। তাই বর্তমানে যে দামে গ্যাস দেয়া হচ্ছে তা বাড়ানো প্রয়োজন। বিদ্যুৎ বিভাগের ঊধ্বর্তন এক কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, আগামী বছরের শুরু থেকে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৮১ পয়সা বাড়ানো জন্য প্রস্তাব দিয়েছে পিডিবি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে ৫ টাকা ৫১ পয়সা করা হবে। তিনি বলেন, ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্যই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে ভর্তুকির পরিমান প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা কমে আসবে। দাম বাড়ানো না হলে চলতি বছরে এ খাতে ভর্তুকি দিতে হবে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা। ওই কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। এখন পিডিবির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে তা গণশুনানি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে বিইআরসি। পিডিবির প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী বছরের শুরুতেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হবে। আর পাইকারিতে বিদ্যুতের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহক পর্যায়ে খুচরা বিদ্যুতের দামও বাড়বে।
এ প্রসঙ্গে বিইআরসির চেয়ারম্যান এ আর খান বলেন, পিডিবির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করার পর কমিশনের কারিগরি কমিটি যদি মনে করেন বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন তাহলে তা উন্মুক্ত গণশুনানিসহ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বিইআরসির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকতা বলেন, দেশের এ খাত খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই বছরে একবার করে দাম সমন্বয় করে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। দাম সমন্বয়ের জন্য বছরের শুরুতেই নতুন মূল্য নির্ধারণ করবে বিইআরসি।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গ্রাহক পর্যায়ে এ পর্যন্ত সাত দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ মাসে গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে প্রতি ইউনিটে ৪০ পয়সা করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। আর পাইকারি বিদ্যুতের দাম দুই টাকা ৩৭ পয়সা থেকে ছয় দফায় ৯৮ দশমিক ৩১ শতাংশ বাড়িয়ে চার টাকা ৭০ পয়সা করা হয়। পাইকারি পর্যায়ে সর্বশেষ বাড়ানো হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে।