নিত্য নতুন কৌশলে বাড়ছে অপরাধ
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ছে। ছুরি,চাপাতি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে প্রতিদিনই ঢাকা মহানগরীর ৪৯টি থানা এলাকায় কোথাও না কোথাও ছিনতাই হচ্ছে। কখনো ককটেল ফাটিয়ে,কখনো ধারাল অস্ত্র দিয়ে। কুপিয়ে কিংবা অগ্নেয়াস্ত্রের গুলিতে আহত করে টাকা লুটে নেয়া হচ্ছে। বড় সড়ক থেকে শুরু করে ছোট অলিগলি সর্বত্রই ছিনতাইকারীদের দাপট রয়েছে। বিশেষ করে ভোরে এবং রাত ৯টার পর ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। পুলিশ এ ধরনের বহু ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা জানেও না। আবার অনেক ভুক্তভোগীর মতে,দূরে টহলরত পুলিশ বা গাড়িতে পুলিশ থাকলেও তার অল্প দূরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। ওইসব পুলিশ ছিনতাইকারীদের দোসর। রাজধানীতে ছিনতাই হঠাৎ করেই বেড়ে যাওয়ায় ১৫টি ছিনতাই চক্রের সন্ধানে মাঠে নেমেছে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী। ঢাকায় গত কয়েক সপ্তাহে কয়েকটি বড় ধরনের ছিনতাই হয়েছে। এর ফলে রাজধানীর ব্যবসায়ীদের মধ্যে শুরু হয়েছে ছিনতাই আতংক। ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হলেও খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধারের তেমন নজির নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন,ছিনতাইয়ের ঘটনায় যেসব মামলা হয় এগুলোর দুর্বল তদন্তের কারণে আসামিরা জামিনে বের হয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে পুলিশের ব্যর্থতাও দায়ী। তবে,পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করছেন- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। যে কয়েকটি ছিনতাই হয়েছে তা বিচ্ছিন্নভাবে ঘটেছে।
ছিনতাইয়ের মাধ্যম: ছিনতাইয়ের প্রধান মাধ্যম এখন মোটরসাইকেল। ঢাকার প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল ও গুলিস্থানে একসময় ছিনতাই চক্রের হোতারা অবস্থান করলেও এখন আর এই গুরুত্বপূর্ণ দুই স্থানে এই চক্রের সদস্যরা সীমাবদ্ধ না থেকে ছড়িয়ে পড়েছে শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থান যাত্রাবাড়ি,পল্টন,শাহবাগ,মালিবাগ,সাতরাস্তা মোড়,ফার্মগেট, আগারগাঁ,শ্যামলী,মিরপুর-১,মিরপুর-১০।
ছিনতাইয়ের কৌশল: ছিনতাইচক্রের সদস্যরা মোটর সাইকেলে চড়ে মহড়া দেয়। ওঁৎ পেতে থাকে রিশকা বা হেটে চলা কোন ব্যক্তির হাতে ব্যাগ কিংবা মূল্যবান কোন জিনিস্পত্র আছে কিনা। সুযোগ-সুবিধা মতো সাধারণ পথচারী ও যাত্রীদের পিছু নেয় আর মোটর সাইকেলে বসে মূল্যবান জিনিসপত্র টেনে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে শুধু জিনিসপত্র খুইয়ে নিস্তার মেলে না অনেকের। কখনো কখনো আঘাত পেয়ে মৃত্যু শয্যায় ও যেতে হয়। এছাড়া,চলন্ত সিএনজির বাম্পারে দাঁড়িয়ে ঢুঁ মারা চক্র ও সক্রিয়। সাধারণত ঢুঁ মারা চক্রের সদস্যদের বয়স ১৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে। ঢুঁ মারা চক্রের সদস্যরা সিএনজির পিছনের বাম্পারে দাঁড়িয়ে থাকে। চলন্ত অবস্থায় ব্লেড দিয়ে সিএনজির ছাদের প্লাস্টিকের বডি ছাতি আকৃতীর কেটে হাত ঢুকিয়ে যাত্রীদের গলার চেইন,মোবাইল টেনে দ্রুত নেমে পড়ে। আর এই ঢুঁ মারার স্থান হয় এমন জায়গা যেখান দিয়ে পালিয়ে যাওয়া খুব সহজ। ঢুঁ মারা চক্রের নিরাপদ স্থান হাতিরঝিল,সাতরাস্তা মোড়,কাকলি,বিশ্বরোড। সন্ধ্যার পর প্রায়শ ঢুঁ মারা চক্রের কবলে পড়তে হয় সাধারণ যাত্রীদের। ব্যাস্ত নগরীর লোক সম্মুখে এসব ঘটনা ঘটলেও প্রত্যক্ষদর্শী যেমন দেখে না দেখার মতো থাকে ঠিক তেমনি এখানেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। সাতরাস্তা মোড় ও মগবাজার দুই স্থানেই পুলিশ বক্স থাকলেও ঢুঁ মারা চক্র এখানে সক্রিয়। এতো কাছাকাছি দুইটি পুলিশ বক্স থাকা সত্তেও এই চক্রের সদস্যদের সক্রিয়তা বিদ্যমান থাকায় পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠে।
পরিসংখ্যান: চলতি বছরের গত সাত মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী,পুলিশের হিসাবেই রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে চলেছে। জানুয়ারি মাসে রাজধানীর থানাগুলোতে ছিনতাই ও দস্যুতার ১৯টি মামলা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে মামলা হয় ২০টি। মার্চে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬-এ। এপ্রিল মাসে থানায় ১৯টি মামলা হলেও মে মাসে মামলার সংখ্যা বেড়ে হয় ২১। গত জুন মাসে রাজধানীর থানাগুলোতে ছিনতাই ও দস্যুতার ৩১টি মামলা হলেও জুলাই মাসে এ মামলার সংখ্যা ২৩। কয়েকটি মামলায় আসামি গ্রেপ্তার হলেও বড় বড় ছিনতাই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের অভিযোগ,তারা ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠান। জামিন পেয়ে আবার একই অপরাধের সঙ্গে তারা যুক্ত হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারী জামিনে ছাড়া পেয়েছে। হয়তো তাদের নেতৃত্বে এসব ছিনতাই হচ্ছে। এদের গ্রেপ্তারের জন্য তাদের একাধিক টিম কাজ করছে।
অপরাধ বাড়ছে: পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে পাওয়া অপরাধ সংক্রান্ত মাসিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,মে মাসের তুলনায় জুনে অপরাধ বেড়েছে ৩৩৭টি। মার্চের তুলনায় এপ্রিলে অপরাধ বেড়েছে দুই হাজার ৪২৮টি। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে বেড়েছে দুই হাজার ২২৬টি অপরাধ। তবে এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে অপরাধ সামান্য কমেছে। এ ছাড়া চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। অপরাধীদের হাত থেকে রেহাই মিলছে না সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশেরও। পরিবহন খাত ও ফুটপাতে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। শাসকদলের নাম ভাঙিয়ে সরকারি জায়গাসহ সাধারণ মানুষের সহায়-সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও। সন্ত্রাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
অনুসন্ধান: অনুসন্ধানে জানা যায়,গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বিভিন্ন অপরাধে সারা দেশে মামলা হয়েছে ৮৯ হাজার ৫০৯টি। এ সময়ে দুই হাজার ২৬৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। ছিনতাই হয়েছে সহস্রাধিক। পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা পাঁচ শতাধিক। ডাকাতির ঘটনা ঘটে ৪৪৮টি। জুন মাসে সারা দেশে মামলা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮। এ সময়ে ঢাকা মহানগরে মামলার সংখ্যা এক হাজার ৬২২ এবং হত্যাকাণ্ড ২১টি। মে মাসে সারা দেশে মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ৫৮১। এ সময়ে ঢাকা মহানগরে মামলা হয়েছে এক হাজার ৬৯২টি,হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২১টি। এপ্রিলে সারা দেশে মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ৬৪৯। এ সময়ে ঢাকা মহানগরে মামলা হয়েছে এক হাজার ৫৫৯টি,হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ২৪টি। মার্চে মামলার সংখ্যা সারা দেশে ১৪ হাজার ২২১,ঢাকা মহানগরে এক হাজার ৫৭০। এ সময়ে ঢাকা মহানগরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ১০টি। এর পাশাপাশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত।
অপরাধ বিশ্লেষকদের অভিমত: অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হচ্ছে না। আবার বর্তমানে র্যাবের টহল না থাকায় শুধু পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এক শ্রেণির অদক্ষ পুলিশ কর্মকর্তা ব্যস্ত রাজনৈতিক নেতাদের খুশি রাখতে। র্যাবের নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীদের মধ্যে উৎসাহ বেড়ে গেছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে দ্রুত র্যাবকে মাঠে নামানোর ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন তাঁরা। বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন,অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় দেশে অপরাধ বেড়েই চলেছে। মাত্র ১০ শতাংশ মামলায় সাজা হচ্ছে। বিচার না হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপসহ প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতাই দায়ী। পুলিশের ওপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ,রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ বা পদোন্নতি ও অদক্ষ অফিসারদের গুরত্বপূর্ণ চেয়ারে বসিয়ে রাখলে কখনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব আছে। নিজেদের আখের গুছানোর জন্য অদক্ষ পুলিশ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক নেতাদের নির্দেশনা মেনেই চলেছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক নেতারা পুলিশের ওপর খবরদারি করছেন। নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর র্যাবের নিষ্ক্রিয়তায় অপরাধীদের মধ্যে উৎসাহ দেখা দিয়েছে। ফলে অপরাধ বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে হলেও জনগণকে নিরাপত্তা দিতে হবে। কোনো অজুহাত তোলার অবকাশ নেই।’ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুক বলেন, দেশে আগের চেয়ে অপরাধ বেড়ে গেছে। পুলিশকে জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাহলেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। পুলিশের জন্য স্বাধীন কমিশন গঠন করলে তাদের ওপর আর কেউ খবরদারি করতে পারবে না। যেসব চেয়ার অযোগ্য পুলিশ অফিসার আকড়ে ধরে আছেন তাঁদের দ্রুত সরিয়ে যোগ্য অফিসারদের নিয়ে আসতে হবে।
মন্ত্রী এবং পুলিশের বক্তব্য: এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিডিয়াকে বলেন,দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। দু-একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। অপরাধীদের ধরতে চলছে অভিযান। সম্প্রতি যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগের ক্লু উদ্ঘাটিত হয়েছে। তিনি বলেন,অপরাধী অপরাধীই,তার কোনো রাজনৈতিক দল থাকতে পারে না। ডিএমপির মুখপাত্র যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন,অপরাধীরা সব সময় ওৎ পেতে থাকে। তবে এ ক্ষেত্রে পুলিশও ব্যাপক তৎপর আছে। একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান,অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকার ৪৯ থানার ওসি ও আটটি ক্রাইম জোনের ডিসিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার। অন্যদিকে বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের নানা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান,দেশে কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটার পরপরই শাসক দলের নেতারা পুলিশকে ব্যবহার করে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। ফলে আসল খুনিরা গা ঢাকা দেয়। হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পুলিশ কর্মকর্তারাও উদ্বিগ্ন।
রাজধানীতে ছিনতাইপ্রবণ এলাকা: বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে রাজধানীতে ছিনতাইপ্রবণ ৪৪৪টি এলাকা চিহ্নিত করা হয়। যা এখন দাঁড়িয়েছে ৩৫১টি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- বনানীর কাকলী মোড়, রামপুরা ব্রিজের নিচে,মেরুল বাড্ডা বাজার,উত্তর বাড্ডা থানা রোডের মুখে,নটর ডেম কলেজ গেট থেকে আল হেলাল পুলিশ বক্স এলাকা, ফকিরাপুল গরম পানির গলি,খিলগাঁও ওভারব্রিজ,পল্টন বিএনপি অফিসের সামনে ভাষানী গলি,রাজারবাগ টেলিকম ভবনের সামনের রাস্তা,শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের সামনের রাস্তা, মানিক মিয়া এভিনিউ,আগারগাঁও ক্রসিং,গাবতলী বাস টার্মিনাল, কল্যাণপুর,শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড,মিরপুর বেড়িবাঁধ,মিরপুর ১ নম্বর সনি সিনেমা হলের সামনে,পীরেরবাগ মুক্তি হাউজিং,মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোড,কাঁটাসুর,ধানমণ্ডির ৮ নম্বর ব্রিজ মোড়,ফার্মগেট সংলগ্ন ইন্দিরা রোড ও টিঅ্যান্ডটি কার্যালয়ের পেছনের গলি,বনানী কাঁচাবাজার রোড,বনানীর সাবেক ঢাকা গেট,মহাখালী কাঁচাবাজারের সামনে,তিব্বত মোড়,খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া,মালিবাগ রেলগেট,সায়েদাবাদ,যাত্রাবাড়ী,জুরাইন রেলগেট,পূর্ব দনিয়া,আলমবাগ,সূত্রাপুরের লালমোহন সাহা স্ট্রিট ও ঢালকানগর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্বর,তিন নেতার মাজারের সামনের রাস্তা, মগবাজারের নয়াটোলা,মৌচাক মার্কেটের সামনে,মালিবাগ রেল গেট, কমলাপুর রেলওয়ে হাসপতাল রোড,গুলশান লেকপাড়,নিকেতন, গুলশান শুটিং ক্লাবের সামনে,চানখাঁরপুল,ইংলিশ রোড ও শনির আখড়া।
চলতি বছর ছিনতাইয়ের ঘটনা: ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তথ্য অনুযায়ী,চলতি বছর জানুযারি মাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ১৯টি, ফেব্রয়ারি মাসে ২০টি, মার্চ মাসে ২৬টি,এপ্রিল মাসে ১৯টি,মে মাসে ২১টি ছিনতাইয়ের ঘটনা রেকর্ড করা হয়। জুন মাসে ১৫টি, জুলাই মাসে ২৫টি, আগষ্টে ২৮টি,সেপ্টেম্বরে ২৩টি,অক্টোবরের ১০ তারিখ পর্যন্ত ২০টি ছিনতাই এর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে। অপরদিকে,সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী,চলতি বছর জানুযারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত ২ শতাধিক ব্যক্তি ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়েন।
শেষ কথা: মনে করা হয় রাজধানীতে যেসব ছিনতাই হয় তার ৫০টির মধ্যে একটিতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। বড় মাপের ছিনতাই না হলে কেউ থানায় গিয়ে বাড়তি ঝামেলায় জড়াতে চান না। ছিনতাই রোধে পুলিশ তথা প্রশাসন কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদিও তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে,অনেক চক্র ধরাও পড়ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। প্রশাসনের এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়বে কেন,তা একটি দুর্বোধ্য বিষয়। বিশেষ করে জনসমক্ষে,জনাকীর্ণ রাস্তায়,প্রকাশ্য দিবালোকে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ছিনতাই করছে,অথচ পুলিশ তাদের কোনো হদিস বের করতে পারছে না। মাঝেমধ্যে যারা আটক হচ্ছে তারাও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে জামিনে ঠিকই বেরিয়ে আসছে। অতঃপর আবার তারা একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বলে এ ব্যর্থতার দায় তাদের ওপরই বর্তায়। তাদের কার্যকর পদক্ষেপেই একে নির্মূল বা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
[শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।]