ভ্রাতৃদ্বিতীয়াঃ হিন্দু সমাজের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: হিন্দু সমাজে প্রচলিত লোকউৎসব ভ্রাতৃদ্বিতীয়া। এর পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত আছে। কাহিনীটি অনেকটা এ রকমঃ কোনও এক কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে যমুনা দেবী তাঁর ভাই যমের পূজা করেন এবং পুণ্য প্রভাবে যমদেব অমরত্ব লাভ করেন। এ কারণে এ তিথির নামান্তর হয় যমদ্বিতীয়া। যমুনার পূজার ফলে ভাই যমের এই অমরত্বের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে পরবর্ত্তীকালে হিন্দু রমণীরাও ভাইয়ের মঙ্গল কামনায় সামান্য ভিন্ন রীতিতে এ উৎসব পালন শুরু করে। বর্তমানে বোন উপবাস থেকে কার্তিক মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইয়ের কপালে বাঁহাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে চন্দনের (ক্ষেত্র বিশেষ;ঘি, কাজল বা দৈ-ও হতে পারে) ফোঁটা দিয়ে হাতে রাখি পরিয়ে দেয়, আর তাঁর দীর্ঘয়ু কামনা করে বলে, “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা/ যমের দুয়াওে পড়ল কাটা”। সময়ের পরির্বতনের সাথে সাখে এই উৎসবের নাম হয় ‘ভাই ফোঁটা’। এ উৎসব উপলক্ষে বোন ভাইকে নতুন জামা-কাপড় কিংবা অন্যান্য উপহার সামগ্রী দেয় এবং ভাইও বোনকে প্রত্যুপহার দেয়। বাড়িতে বাড়িতে এই দিন বিশেষ ভোজের আয়োজন করা হয়।
ভাই ফোটার দিন ভাইয়ের হতে রাখি পরিয়ে দেয়ার অন্তরালে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার সম্পৃক্ততা আছে। ১৩১২ বঙ্গাব্দ (১৯০৫ সাল) বঙ্গভঙ্গ আইন পাস হলে তার প্রতিবাদ এবং সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে ৩০ আশ্বিন দুই বঙ্গের লোকদের হাতে হলুদ সুতার রাখি পরিয়ে দেয়া হয় যা রাখিবন্ধন উৎসব নামে পরিচিতি লাভ করে। এর মন্ত্র হলোঃ “ভাই ভাই এক ঠাঁই”। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর এর নেতৃত্ব দেন। তিনি হয়তো রাখি বন্ধনের প্রেরণা লাভ করেছিলেন উত্তর ভারত থেকে। সেখানে হিন্দু ও জৈনসমাজে শ্রাবণী পূর্ণিমায় সৌহার্দ্য বা ভ্রাতৃত্ব রক্ষার উদ্দেশ্যে পরস্পরের হাতে রঙ্গিন সুতা বেঁধে দেয়া হয়। সুতা বাঁধার সময় তারা বলে যারা দ্বারা মহাবলী দৈত্যরাজ বলিকে বাঁধা হয়েছিল তার দ্বারা আমি তোমাকে বাঁধলাম, অর্থাৎ এ বন্ধন যেন কখনো ছিন্ন না হয়। বাংলার গৃহবধুদের রাখিবন্ধন আন্দোলনে সামিল করার উদ্দেশ্যে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী রচনা করেন বঙ্গলক্ষীর ব্রতকথা।
[শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম]