ভূতড়ে নগরীতে পরিণত হয় রাতের ঢাকা
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ২১ জানুয়ারী (বুধবার) সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১০টায় এ খবর লেখা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্নস্থানে ককটেল বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছে রিকশা চালক, পথচারীসহ অন্তত ৭ জন। এছাড়াও চারটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর করা হয়েছে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ ঘটনার পরপরই রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে যায়। দিনের বেলা নগরীতে ব্যক্তিগত গাড়িসহ গণপরিবহন চলাচল করলেও রাতে নগরীতে যান চলাচল কমে যায়। যে কারণে অধিকাংশ কর্মজীবি মানুষকে ঘরে ফিরতে হয় রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে। চলতে হয় ঝুঁকির মধ্যে। নগরীতে পুলিশের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও রাতে নাশকাতা হচ্ছে হরহামেশাই। ফলে মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। সন্ধ্যার পরপরই চিরচেনা রাজধানী পরিণত হয় ভয়ের নগরীতে।
বিএনপির নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধে দিনে চেয়ে রাতে নগরীতে বেশি ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়িতে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া যায়। জানা গেছে, রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এতে আতহ হয় অন্তত ৫ জন। এসময় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। আহতরা হলেন- নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএর ছাত্র ওয়াক্তিম আহমেদ (২২), জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা মো: জাকির হোসেন (৩২) ও পথচারী রাসেল, ফারুক এবং রিকশা চালক সালাউদ্দিন। আহতাবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতরা জানান, রাতে টিএসসি এলাকায় রোকেয়া হলের উল্টোদিকে চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এসময় হঠাৎ সেখানে ককটেলগুলো বিস্ফোরিত হয়। এতে তাদের হাতে এবং পায়ে স্পিন্টার বিদ্ধ হয়। ঘটনার সময় সেকানে উপস্থিত অন্যরা সাথে সাথে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, “টিএসসি এলকায় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। এটিএম বুথের সামনে থেকে একটি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কেউ আহত হয়েছে কিনা সে বিষয়ে কিছু জানতে পারিনি।” এছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে রাতে একটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে।
এর আগে, রাত ৭ টা ৫৮ মিনিটে মিরপুরে সনি সিনেমা হলের সামনে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তবে এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সত্যতা নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিস জানায়, প্রজাপতি পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব ১১-৬৯১৪) আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। খবর পেয়ে মিরপুর ফায়ার স্টেশনের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। রাত ৭ টার দিকে মোহাম্মদপুরে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তর। এ সময় বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যদর্শীরা জানান, ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে মোহাম্মদপুর-মতিঝিল রুটের মৈত্রী পরিবহনের একটি বাসে (ঢাকা মেট্রো ব-১১-১৭৪৩) ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে দুর্বৃত্তরা। এরপর পেট্রোল ঢেলে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে তারা চলে যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলে। তবে বিষয়টি অস্বিকার করে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আজিজুল হক বলেন, “আমার এলাকায় কোন আগুনের খবর পাওয়া যায়নি।” সন্ধ্যা ৬টা ৫৩ মিনিটে যাত্রাবাড়ীতে বিএনপির নেতৃত্বধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের সাথে আ’লীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এ সময় একটি বাস ও একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। এছাড়াও ৬টি গাড়িতে ভাঙচুর করার খবর পাওয়া গেছে।
জানাগেছে, যাত্রবাড়ীর শহীদ ফারুক সড়কে হরতাল ও অবরোধের সর্মথনে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ দলের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শহীদ ফারুক সড়ক থেকে যাত্রাবাড়ী মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। মোড়ের কাছাকাছি পৌঁছালে উপস্থিত আ’লীগ কর্মীরা বিশ দলের মিছিলের নেতা কর্মীদের ওপর হামলা করে। এসময় ২০ দল ও আ’লীগ নেতা কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এসময় চলাচলরত ২টি বাস ও ছয়টি লেগুনা ভাংচুর করা হয়। একটি বাসে আগুন ও বেশ কয়েকটি ককটেল নিক্ষেপ করা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, যাত্রাবাড়ীতে একটি ট্রাকে আগুন দেয়া হয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌছার আগেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।