চাঁদোয়া…

চাঁদোয়া…
কাজরী তিথি জামান: ভাবলাম চাঁদ নিয়ে দু’কথা লিখবো । এইসব মামুলি লেখা হেঁসেলে মানায়। তবে ইচ্ছের তিন ডানা ,টানাপোড়ন ভীষণ ।প্রথমেই মনে এলো “চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি…”এই কলিটির সাথে একটা প্রাণবন্ত মুখও ভেসে উঠলো । তার নাম বকুল । উপস্থাপিকা হিসাবে অতুলনীয় এই বন্ধুটি সেদিন (টুনির একক সঙ্গীত সন্ধ্যা)বারবার বলছিলো “ঘরের কথা পরে জানলো কেমনে!”…..মানুষ যা জানাতে চায় তার সঙ্গে উপযুক্ত অনুষঙ্গও চায় ।নইলে লাভ কোথায় !সত্যের মাঝে যে জন্মায়নি সে সত্যকে সহজে নিতে পারে না ।
তালাত মাহমুদ যখন গাইতে থাকেন,”চাঁদের এতো আলো তবু সে তোমায় যাচে………”তখন একটু উলোট-পালোট হয় ঘর-দরজা কড়িকাঠে । বাবা বলতেন ,”কখনও কোথাও যাবোনা তোকে ছেড়ে….”!!!হা হা হা……। এখন বাবার মতো অচেনা কে আর !আরশি নগরের পড়শি;বসতে পারাণি কড়িও দেয়না তেল ও পায়না । এমন সময় সেই কিশোর বেলার টানে কানে ভাসলো আরো একটি গান। চাঁদের সাথে আমি দেবোনা তোমার তুলনা ,তুমি দূরে চলে যাবে”।
এই দূরত্ব শব্দটি বেশ । অনেকটা গিরগিটির মতো । দূরত্ব মানে একটা সময়ের অপেক্ষা কখনও ভালো-মন্দের মাঝে উত্তরণের সমীক্ষা কখনও আপন খড়কূটোয় আপন অভিমান আবার কখনও অচেনা ! আরো বলা যায় হয়তো ,বলতে গেলেই তো পথ হয়।পথ হলে রথ আর রথ মানেই কেউ একজন মুচকি হাসেন । তিনি হাসেন বলেই শক্তি পাওয়া,বেঁচে থাকা,সংষত থাকা আর অতি অবশ্যই লড়াই করে বেঁচে থাকা । পূজন’দা বলেন লড়াই মানেই জীবন । জীবন মানেই লড়াই । এই মুহূর্তে চাঁদটার গায়ে লক্ষ কোটি ছিদ্র ,পোড়া গন্ধে চারপাশ ছেয়ে আছে । ঝলসানো রুটি??? আহা ! কী তৃপ্তি । মুখে বলা হয়নি কখনও ।তবে লিখতে দোষ কী ?! পড়বেন তো সেসব অন্তরঙ্গ ছায়ামুখ যাদের স্নেহছায়া থাকে নিরবে আবার তাদের মুখরতায়ও পাই মুগ্ধমন্ত্র , এগিয়ে যায় ……
শেষে চাঁদ নিয়ে আর একটি গানের কথা না বললেই নয় ! এস.আই.টুটুলের গাওয়া,”আমার মরণ চাঁদনি পসর রাইতে যেনো হয় …”দয়াময় তো আছেন। আর আছেন বলেই বাসে-ট্রাকে-ট্রেনে পুড়ছি । আমরা আমাদেরকে বলছি,”মানুষ পুড়ছে।” ঐ দুইজন নোয়াখালী….আজ সাত জন কুমিল্লা …পরশুর বাপ/বেটি/মা যশোরের ! লোক পুড়ছে কখনও মানুষ পুড়ছে কখনও দরিদ্র ও ঋণগ্রস্থ দেশের সম্পদ পুড়ছে । কেনো বলছিনা আমরা পুড়ছি! আসলে এসব প্রেমের মতোই “ওপেন সিক্রেট”! মাঝে মাঝে যা কিনা নিজেই বোঝা যায় না , আর যা বুঝিনা তা বোঝানো বড় দায় ।বড় যন্ত্রণা ।
এরপর চাঁদে আর একটি নিরপেক্ষ যন্ত্র পাঠাতে চাই যে আমাদের মানে এই চাঁদনী হাহাকারে ডুবন্ত মানুষদের কিছু ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে পারবে । সেই যন্ত্রটিকে তখন বিশ্বাস করবো তো ! বিশ্বাসে তখন ফরমালিন দেওয়া হবেনা নিশ্চয়! আশা করছি ।
ক্ষমা-ঘেন্নায় উতরে যায় বলেই লিখতে চেষ্টা করি ।
রবির কাছে যাই এবার?
“আমারে যে জাগতে হবে
কে জানে সে আসবে কবে
যদি আমায়
যদি আমায় পড়ে তাহার মনে
আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে……”
[কাজরী তিথি জামান: প্রাবন্ধিক।।]

 

অতিথি লেখক