জয় দিয়ে বাংলাদেশের সূচনা
ক্রীড়া প্রতিবেদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ ভিন্ন কন্ডিশনে ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে, তা আগে থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল। স্লো ও লো বাউন্সি উইকেট থেকে পেস ও বাউন্সি উইকেটে হঠাৎ খেলা কঠিন কাজ বটে! সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা কতটুকু সফল, তা স্কোরবোর্ড দেখলে বোঝা যাবে না! কারণ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টসে জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ২৯.১ ওভারে বাংলাদেশের রান ৪ উইকেটে ১১৯। সেখান থেকে ৫০ ওভারে বাংলাদেশের রান ২৬৭। অস্বাভাবিক এক পুঁজি! আর অস্বাভাবিক পুঁজি তাড়া করতে নেমে ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় আফগানিস্তানের ইনিংস। টাইগাররা জয় পান ১০৫ রানে। কাবুলিওয়াদের ১০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত সূচনা করে বাংলাদেশ।
পঞ্চম বিশ্বকাপের শুরুর দিকের ধাক্কাটা বেশ ভালোভাবেই সামলে নেয় সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। পঞ্চম উইকেটে এই দুই ব্যাটসম্যান ১১৪ রান যোগ করেন মাত্র ৯৫ বলে। এই জুটিতে সাকিবের অবদান ৫০ ও মুশফিকের ৬২ রান। দলের স্কোরকে ১১৯ থেকে টেনে নেন ২৩৩ পর্যন্ত। এরপর সাকিব সাজঘরে ফেরেন। হামিদ হাসানের বল ব্যাট ও পায়ে লেগে সাকিবের স্ট্যাম্প খুঁজে পায়। ৫১ বলে ৬টি চার ও ১ ছক্কায় ৬৩ রানে শেষ হয় সাকিবের ইনিংস। এই ইনিংসের মধ্য দিয়ে সাকিব আল হাসান প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ৪ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসে ৭১ রান। ৫৬ বলে ৬টি চার ও ১ ছক্কায় ৭১ রান করেন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক। আফগান-দলপতির বলে মিড উইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সামিউল্লাহ শেনওয়ারির হাতে ক্যাচ দেন মুশফিক। ম্যাচ-সেরাও নির্বাচিত হন তিনি। সাকিব ও মুশফিকের নৈপুণ্যে বাংলাদেশ লড়াকু স্কোর পেলেও ইনিংসের শুরুটা ছিল হতাশাজনক। ৫২ রান তুলতেই দুই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন। দুজনকে সাজঘরের পথ দেখান মিরওয়াইস আশরাফ। তামিম ইকবাল (১৯) উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আর এনামুল (২৯) এলবিডব্লিউর শিকার হন। তৃতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে রক্ষণাত্মক ক্রিকেটকে বেছে নেন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু আফগান পেসার শাপুর জারদানের জোড়া আঘাতে দুজনকে সাজঘরে ফিরতে হয়।
২৬তম ওভারের পঞ্চম বলে ও ২৯তম ওভারের প্রথম বলে শাপুর জারদান একে একে ফিরিয়ে দেন সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে। দলীয় ১০৩ রানে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন সৌম্য সরকার। সাজঘরে ফেরার আগে ২৫ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কা হাঁকিয়ে ২৮ রান করেন তিনি। এরপর ১১৯ রানে উইকেট রক্ষক আফসার জাজাইর হাতে ক্যাচ তুলে দেন রিয়াদ। বিদায়ের আগে ৪৬ বলে মাত্র ২৩ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। রিয়াদের বিদায়ের পর শুরু হয় সাকিব ও মুশফিকের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। আফগান বোলারদের ওপর চেপে বসে দ্রুত রান তুলে নেন বাংলাদেশের এই দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। সাকিব ও মুশফিকের দাপুটে ব্যাটিংয়ে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে (৩৬-৪০ ওভার) ৪৮ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। এই দুই ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর মাশরাফির ১৪ রান শেষ দিকে বাংলাদেশের পুঁজিকে সমৃদ্ধ করে।
আফগানিস্তানের হয়ে হামিদ হাসান, শাপুর জারদান, মিরওয়াইস আশরাফ ও আশরাফ আলম ২টি করে উইকেট নেন। ১টি উইকেট নেন মোহাম্মদ নবী। বাংলাদেশের দেওয়া ২৬৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে আফগানিস্তান। দলীয় মাত্র ৩ রানের মাথায় ৩ উইকেট হারিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাতে থাকেন আফগানরা। প্রথম ওভারের শেষ বলে দলীয় ২ রানে আফগান শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশের সেরা পেসার মাশরাফি। জাভেদ আহমাদিকে (১) ফিরতি ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান তিনি। এরপর চোখের পলকেই আরো ২ উইকেট হারিয়ে ফেলেন আফগানরা। ইনিংসের দ্বিতীয় ও ব্যক্তিগত প্রথম ওভারের প্রথম বলে আফসার জাজাইকে (১) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রুবেল হোসেন। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে আবার আফগান শিবিরে আঘাত হানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এবার তিনি সাজঘরে ফেরান আসগার স্টানিকজাইকে (১)। এরপর চতুর্থ উইকেটে নওরোজ মঙ্গল ও সামিউল্লাহ শেনওয়ারি ৬৩ রানের জুটি গড়ে মুমূর্ষু আফগানদের কিছুটা অক্সিজেন জোগান। তবে নওরোজ মঙ্গলকে (২৭) বিদায় করে আফগানদের আবারও বিপদে ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। তার বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন রুবেল। মঙ্গলের বিদায়ের পর সামিউল্লাহও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ৭৮ রানে সাব্বির রহমানের দারুণ থ্রোতে রান আউটের শিকার হন সামিউল্লাহ। ৭৫ বলে দুটি চারের মারে ৪২ রানের ইনিংস খেলেন সামিউল্লাহ। এরপর মোহাম্মাদ নবীর (৪৪) ছাড়া আফগানিস্তানের আর কোনো ব্যাটসম্যানই তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি। ফলে ৪২.৫ ওভারে ১৬২ রানে অলআউট হয় তারা। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট। সাকিব নিয়েছেন দুটি উইকেট। এ ছাড়া তাসকিন, মাহমুদউল্লাহ ও রুবেলের ঝুলিতে জমা পড়ে ১টি করে উইকেট।