ক্রদ্ধ শোক ক্রোধ থেকে গলে গলে ঝরে পড়ছে!
শেখ তসলিমা মুন: না, অভিজিৎকে আমি ব্যাক্তিগতভাবে চিনতামনা। আমার ফ্রেডলিস্টে ছিল। তাঁর পোষ্টগুলো সেজন্য দেখার সুযোগ হতো। কিন্তু রিসেন্ট পোষ্টগুলো আমি মিস করেছি কেন জানিনা। সে ছিল মেধাবী। তাঁর মেধার এবং প্রতিভার অনুরাগী ছিলাম মাত্র। তাঁর বই আমার হাতে আসেনি। ২০০৭ সালের দিকে আমি ব্লগে ছিলাম। ছদ্মনামে লিখতাম। এবং আলোচনাই বেশী করতাম আসলে। ২০১০ পর্যন্ত। এখনকার অনেক প্রবীণ ব্লগার তখন বেশ নতুন ব্লগার ছিল। অনেকের নাম সেই সুবাদে জানা।
অভিজিৎকে যদি আমি একেবারেও না চিনতাম, বা কোনদিন নামও না শুনতাম আমার একই অনুভব হতো। কারন সে এমন একটি গোত্রভুক্ত মানুষ ছিল, চিন্তাবিদ ছিল, এমন একটি জগতে এক মুক্ত প্রান ছিল, তাঁর সাথে কোন পরিচয় লাগেনা। সে তাঁর দর্শন এবং আদর্শিক জগতেই আমার আত্মার নিকটের একজন মানুষ ছিল। ছিল আমার পরমআত্মিয়।
আজ ৮ দিন হয়ে গেছে। শোকের এক কঠিন পাথরে রক্তাক্ত হয়েছি। অভিজিৎ। যাকে কোনদিন দেখিনি। ঝাপসা মনে পড়ে সে আমাকে একবার মুক্তমনায় লেখার অনুরোধ করেছিল। এর বেশী কথপকথন তাঁর সাথে আমায় হয়নি। তাঁর শরীরটাকে আঁকড়ে ধরে বন্যা আকুল হয়ে তাকিয়ে আছে, যেন পর্দা কাঁপানো কোন এক সাড়া জাগানো ছবিতে তাঁর জীবনের মর্মান্তিক সিনটি করছে, ঠিক সেখানে আমি আছড়ে পড়ে আছি । আমি আর উঠতে পারছিনা। বন্যা। বন্যা। বন্যা। তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো। তোমার সাথে দেখা করতে আমি পাড়ি দেবো সাগর। কিন্তু যারা বন্যার দুবাহু থেকে অভিজিৎকে ছিনিয়ে নিলো, অসহায় বন্যা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে, যেন যুদ্ধক্ষেত্রে হাল ছাড়া এক অসহায় যোদ্ধা! বন্যা, কোনদিন তাদের ক্ষমা করবোনা। আমি যতদিন বাঁচবো, যেভাবে পারি প্রতিশোধ নেবো। সব প্রতিশোধ রক্ত নিয়ে হয়না।
রক্তাক্ত বন্যা, রক্তের শাওয়ারে নেয়ে পিচ্ছিল হাতে অভিজিতকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাচ্ছে, পারছেনা, বন্যা ধরে রাখতে পারছেনা অভিজিৎকে, বারবার আমি ছুটে গেছি সেখানে বন্যার কাছে, কি নিষ্ঠুর সেই দৃশ্য। ব্যর্থতা আমাকে উন্মাদ করে দিয়েছে।
অভিজিৎ এর মৃত্যুর পর রক্তের স্তুপে অভিজিৎকে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকতে দেখেও যারা অভিজৎকে অসম্মান করেছে, আঘাত করেছে, কথা এবং কলমে আবারো ক্ষত বিক্ষত করেছে, রক্তাক্ত দেহটিতে শপাং শপাং চাবুক মারছে, ছুটে গেছি মাটিতে পড়ে থাকা রক্তাক্ত অভিজিতকে দুহাতে ঢাকতে, না, আর নয়, আর একটি আঘাতও নয় অভিজিতের রক্তাক্ত শরীরে!!
এক সপ্তাহ! ক্রদ্ধ শোক ক্রোধ থেকে গলে গলে ঝরে পড়ছে।
[লেখাটি লেখিকার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত।।]