মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারঃ ডিসেম্বরে কাজ শেষ হচ্ছে না
পুলক চৌধুরী,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ পূর্বনির্ধারিত সময় এবং চুক্তির শর্ত অনুযায়ী মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিলো গত বছরের ডিসেম্বরে। চলতি বছরের শুরুতে এই ফ্লাইওভারটির উদ্বোধন অর্থাৎ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা ছিলো। তা তো সম্ভব হয়ইনি, এখন আগামী ডিসেম্বরে ফ্লাইওভার উদ্বোধনের যে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং যেভাবে কাজ চলছে তাতে, কবে নাগাদ এই কাজ শেষ হয় তাও কেউ বলতে পারছেন না। অথচ আগামী ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লাইওভার উদ্বোধন করবেন বলে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজধানীর যানজট নিরসনের অংশ হিসেবে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১১ সালে অনুমোদন করে সরকার। আর ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে এর নির্মাণকাজ শুরু হয়। দুবছর মেয়াদী এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্যাকেজ ৫ এর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ২৫ ভাগ। প্যাকেজ ৬ এর ৪৫ ভাগ এবং প্যাকেজ ৪ এর ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়াচ্ছে, ৩টি প্যাকেজের গড় কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪০ ভাগেরও কম। কারণ, সবচে’ বড় কাজ প্যাকেজ ৫। কাজ এবং অর্থের অংকের দিক থেকে এটি অন্য দু’টি প্যাকেজের মোট অংকের সমান। অথচ এই প্যাকেজটির তিন চতুর্থাংশ কাজই এখনো অসম্পন্ন রয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ২০১৫ সালে তো নয়ই, ২০১৬ সালেও কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ঠিকাদার এবং এলজিইডি কর্মকর্তাদের অসৎ উদ্দেশ্য ও পারষ্পরিক যোগসাজশই কাজ বিলম্বের মূল কারণ। প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর অজুহাত দাঁড় করাতেই এরা পারষ্পরিক যোগসাজশে প্রকল্পের কাজ ধীরভাবে এগুনোর কৌশল নিয়েছে। সরকার ও জনগণকে জিম্মি করে এই চক্রটি তাদের অবৈধ স্বার্থ হাসিল করে নিতে চায়। ইতিপূর্বে এলজিইডি প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ছিলেন এই অপকর্মের মূলে। বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শ্যামা প্রসাদ অধিকারীও একই পথ ধরেছেন বলে সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে কাজে বিলম্বের কারণে এই সড়কে চলাচলকারী লাখ লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলতি মাসের প্রথমদিকে এই সড়ক পরিদর্শনে এসে ১৫ দিনের মধ্যে সড়কটি চলাচলের উপযোগী করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু, মন্ত্রীর নির্দেশে পরিস্থিতির সামান্যতমও অগ্রগতি হয়নি এ পর্যন্ত। মন্ত্রী পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নতি দেখার জন্য আবার সড়কটি পরিদর্শনে আসার কথা বলেছিলেন। যতোটা জানা গেছে, সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় মন্ত্রীর পরবর্তী পরিদর্শন কর্মসূচি ভন্ডুল হয়ে গেছে। তথ্যমতে, চার লেনবিশিষ্ট ৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩৭৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা দেবে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট ও ১৯৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকা দেবে ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। অবশিষ্ট ২০০ কোটি ৪৭ লাখ টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। জানা গেছে, কাজ যাতে দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন হয় এবং ভোগান্তি যাতে কম হয় এ লক্ষে ফ্লাইওভারের মোট কাজকে তিনটি আলাদা প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছিলো। প্যাকেজ তিনটির কাজ আলাদা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেয়ার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু, এর মধ্যে তমা কনস্ট্রাকশন চাতুরির আশ্রয় নেয়। এরা নিজেরা সরাসরি একটি প্যাকেজের টেন্ডারে তো অংশ নেয়-ই, এমনকি চীনের মেটালারজিক্যাল কনস্ট্রাকশন ওভারসিজ কোম্পানি নামক একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে তমা কনস্ট্রাকশন টেন্ডার জমা দিয়ে আরো একটি কাজ ভাগিয়ে নেয়। এখন একাই দু’টি প্যাকেজের কাজ করছে তমা। বলা হচ্ছে, চীনের ওই প্রতিষ্ঠান তমাকে এই প্যাকেজটি সাব-কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। যদিও চুক্তির শর্তানুযায়ী এক্ষেত্রে সাব-কন্টাক্ট সম্পূর্ণ অবৈধ। তবে দু’টি প্যাকেজতো দূরে থাকুক একটি প্যাকেজের কাজই এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি তমা কনস্ট্রাকশন। যন্ত্রপাতি কেনার কথা বলে বড় অংকের অর্থ অগ্রিম নিয়েছে সরকারের কাছ থেকে। যদিও এটা অবৈধ, তারপরও যেহেতু এরা প্রভাবশালী, তাই চাপ দিয়ে আদায় করে নিয়েছে। কিন্তু, যন্ত্রপাতি কেনার কথা বলা হলেও বাস্তবে তমা কনস্ট্রাকশন উন্নতমানের কোন যন্ত্রপাতি ক্রয় করেনি। পুরনো লক্কর-ঝক্কর মার্কা যন্ত্রপাতি দিয়েই চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। এর ফলে একদিকে যেমন কাজের গুণগত মান রক্ষা হচ্ছে না তেমনি পাইল বোরিং এবং কস্টিংএ ১০ ঘন্টার জায়গায় ২৪ থেকে ৩০ ঘন্টা সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে প্রকল্পের কাজ নিম্নমানের হচ্ছে, অথচ সময় ব্যয় হচ্ছে বেশি। ফলে নির্ধারিত সময় ফুরিয়ে এলেও শেষ হচ্ছেনা ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ।