অবিভক্ত বাংলার নবজাগরনের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায়
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: রাজা রামমোহন রায় ছিলেন অবিভক্ত বাংলার নবজাগরনের অগ্রদূত। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজ, শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কারক এবং ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা। এই মনীষী ১৭৭২ সালে হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। রামাকান্ত রায় ছিলেন তার বাবা এবং তারিণী দেবী ছিলেন তার জননী। রাজা রামমোহন রায় সংস্কৃত, আরবী, ফারসী, ইংরেজি ভাষায় পান্ডিত্য লাভ করেন। হিব্রু, গ্রিক, সিরীয় প্রভৃতি ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলাম ধর্ম, খ্রিস্ট ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি প্রথমে কোম্পানির চাকুরীতে যোগদান করেন এবং দায়িত্বপূর্ণ পদে উন্নীত হন। তিনি একসময়ে রংপুর কালেক্টরেটে কর্মরত ছিলেন। তিনি এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষাপাতী ছিলেন। এছাড়া রামমোহন রায়ের বিপ্লবী চিন্তার ফসল হিন্দুধর্ম সংস্কার আন্দোলন। তিনি প্রতিমা পূজা বর্জন করেন এবং বিশ্বাস করতেন এক সর্বজনীন ঈশ্বরপূজায়। তিনি ১৮২৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্রাহ্মসভা, যা পরবর্তী সময়ে ব্রাহ্মসমাজ নামে পরিচিতি লাভ করে। রামমোহন রায়ের সমাজ সংস্কার আন্দোলনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদ। সনাতন হিন্দুধর্মে প্রচলিত অমানবিক ও নির্মম সহমরণ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। তার অক্লান্ত চেষ্টার ফলে ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্ক আইন পাশ করে সতীদাহ প্রথা রহিত করেন। রামমোহন রায় স্বীয় ধর্মমত ও ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি প্রচারের জন্য ১৮২১ সালে সংবাদ কৌমুদী নামে একটি বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশ করেন।
বাঙালির মধ্যে জাতীয় চেতনার উন্মেষ সাধনে রামমোহন রায়ের ভুমিকার কথা আজও সশ্রদ্ধচিত্তে উচ্চারিত হয়। তাঁর মাধ্যমেই বাঙালি সর্বপ্রথম মতৈক্য পোষণ করে সংঘবদ্ধ হয় এবং তাঁদের নিজস্ব মতামত প্রদানে সক্ষম ও উৎসাহী হয়। রামমোহন রায় বাঙালিকে জাতি হিসেবে আত্মপরিচয় সমৃদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ ফারসী ভাষায় লেখা (ভূমিকা অংশ আরবীতে) তুহফাতুল মুবাহ্ হিন্দীন। তাঁর অন্যান্য প্রকাশিত গ্রন্থ গুলো হলো: বেদান্তগ্রন্থ, বেদান্তসার, কেনোপনিষদ, ঈশোপনিষদ, কঠোপনিষদ, মাণ্ডূক্যোপনিষদ ও মুণ্ডকোপনিষদ। ১৮৩০ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি কলকাতা থেকে বিলেত যাত্রা করেন। দিল্লীর বাদশাহ তাঁকে ‘রাজা’ উপাধি দিয়ে ভার দেন বিলেতে গিয়ে রাজদরবারে বাদশাহের ভাতা বৃদ্ধির সুপারিশ করার। ১৮৩১ সালের ৮ এপ্রিল রামমোহন লিভারপুলে পৌঁছান। সেখানে সম্ভ্রান্ত ও বিদ্বৎসমাজে তাঁর প্রচুর সমাদর হয়েছিল। রামমোহন রায় ১৮৩১ সালে মুঘল সাম্রাজ্যের দূত হিসেবে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করেন। ১৮৩২ সালের শেষের দিকে কিছুদিনের জন্য তিনি ফ্রান্সেও গিয়েছিলেন। ১৮৩৩ সালে এই মনীষী মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলের কাছে স্টেপল্টনে মৃত্যুবরণ করেন। ব্রিস্টলে আর্নস ভ্যাল সমাধিস্থলে তাঁকে কবর দেয়া হয়। ১৯৯৭ সালে মধ্য ব্রিস্টলে তাঁর একটি মূর্তি স্থাপন করা হয়। আজ ২২ মে। বাংলার নবযুগের প্রথম ও প্রধান নায়ক কীর্তিমান পুরুষ রাজা রামমোহন রায়ের ২৪৩তম জন্মবার্ষিকী।
[শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম]
jsb.shuvo@gmail.com