সাকা’র ফাঁসির আদেশ বহাল
বিশেষ প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ২৯ জুলাই (বুধবার) সকাল ৯টা ৫ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে সাকা চৌধুরীর পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাহজাহান, সাকা চৌধুরীর দুই ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, জামায়াত নেতাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির, নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, মোমতাজ উদ্দিন ফকির, প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, সুলতান মাহমুদ সীমন প্রমুখ।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে ট্রাইব্যুনাল যে চার অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন সেগুলোর সাজাই বহাল রেখেছেন। ফলে চূড়ান্ত রায়েও (৩ নম্বর অভিযোগ) অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, (৫ নম্বর অভিযোগ), রাউজানের সুলতানপুর গ্রামে তিনজনকে হত্যা, (৬ নম্বর অভিযোগ) রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ৫০-৫৫ জনকে গণহত্যা এবং হত্যার(৮ নম্বর অভিযোগ) চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে দায়ে ফাঁসির আদেশ বহাল থাকলো।
ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত অন্য ৫ অভিযোগের মধ্যে দু’টিতে ২০ বছর এবং আরো দু’টি অভিযোগের প্রতিটিতে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে। তবে ৭ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল সাকা চৌধুরীকে ২০ কারাদণ্ড দিলেও আপিলের রায়ে এ অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ৭ জুলাই উভয়পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে সাকা চৌধুরীর রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন নির্ধারণ করেছিলেন আপিল বিভাগ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আপিল বিভাগের পঞ্চম রায় এটি।
আপিল বিভাগের রায়ের পর জামায়াতের দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আপিলের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন এবং আপিলের রায়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। এ ছাড়া শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতের আমির গোলাম আযম ও বিএনপির প্রাক্তন মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপিলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকালে হরতালে গাড়ি পোড়ানোর একটি সালাউদ্দিন কাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয় ১৯ ডিসেম্বর। ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তার বিচার শুরু করেন ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. নূরুল ইসলামসহ মোট ৪১ জন সাক্ষ্য দেন। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেওয়া আরও চারজনের জবানবন্দি সাক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয়। অন্যদিকে সালাউদ্দিন কাদেরের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন তিনি নিজেসহ মোট চারজন। ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির দণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। চট্রগামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসি দেওয়া হয়।
তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ফাঁসির দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন তিনি। গত ১৬ জুন সাকা চৌধুরীর আপিল মামলার শুনানি শুরু হয়। ৭ জুলাই দুইপক্ষের আপিল শুনানি শেষ হয়। আপিলে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যার্টনি জেনারেল মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল একরামুল হক ও সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল বশির আহমেদ। সাকা চৌধুরীর পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী এস এম শাহজাহান। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার তানভীর আহমেদ আল-আমিন।