চট্টগ্রামে বোমা হামলা: আটক ২
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,চট্রগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিএনএস ঈশা খাঁ ঘাঁটির অভ্যন্তরে মসজিদসহ তিন স্থানে বোমা হামলার ঘটনায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে। আটক ২ জনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে ঈশা খাঁ ঘাটির ওই মসজিদ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে সিএমপির সহকারী কমিশনার (বন্দর) জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন।
১৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দুপুরে জুমার নামাজ চলাকালে এবং নামাজের পরপর বিএনএস ঈশা খাঁ ঘাঁটি জামে মসজিদ, নৌবাহিনী পরিচালিত নেভাল হাসপাতাল এবং ১ নং নেভাল কলোনীতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। মসজিদে বোমা হামলার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে মুসল্লিরা দুই জনকে আটক করে। আটককৃত দু্ইজনই নৌ সদস্য বলে জানা গেছে। তারা হলেন- ভলপিকার মান্নান ও ব্যাটম্যান রমজান। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মসজিদে ককটেল বিস্ফোরনে ৬ জন আহত হয়েছে। অবশ্য তিনটি বিস্ফোরণে এক কর্ণেলসহ ১০ থেকে ১২ জনের মত আহত হয়েছে বলে স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। বিস্ফোরণে আহতদেরকে স্থানীয় নেভাল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। গুরুতর আহত একজনকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে আটক দু’জনই ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে কি কারণে তারা হামলা চালিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। সেই সাথে তারা কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কিনা তাও জানা যায়নি। তবে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে তারা নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে কিনা বা তাদের পিছনে অন্য কোন শক্তি আছে কিনা তা অনুসন্ধান চলছে।
সূত্র জানায়, আটক নৌবাহিনীর দুই সদস্যের মধ্যে ব্যাটম্যান রমজান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে এক বছর আগে নৌবাহিনীতে যোগ দেয়। নৌবাহিতে চাকুরি নেয়ার সময় তার জমা দেয়া সার্টিফিকেট জাল ছিল বলে পুলিশ জানায়। রমজান গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। এছাড়া ভলপিকার মান্নানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। সে ছয় মাস আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে। ঘটনার পর থেকে নৌ বাহিনীর সদস্যরা পুরো ঘাঁটি এলাকা ঘেরাও করে রেখেছে। র্যাবি পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং সংবাদ কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও তাদের প্রথমে নৌ ঘাঁটিতে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইন শৃংখলা বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করলেও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এসব ঘটনার কোন তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে নৌ বাহিনী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয় বিএনএস ইশা খাঁ ঘাঁটির অভ্যন্তরে জুমার নামাজ চলাকালে। এতে কর্ণেল জাহিদ নামে নেভাল হাসপাতালে একজন চিকিৎসকসহ কয়েকজন আহত হয়। কর্ণেল জাহিদ নেভাল হাসপাতালের চক্ষু ডাক্তার বলে জানা গেছে। দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে নৌ ঘাঁটি গেইটের বিপরীতে অবস্থিত ১ নং নাবিক কলোনীতে। এখানে কোন হতাহত হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। তৃতীয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে নামাজের পর নেভাল হাসপাতাল মসজিদের পাশে। এখানেও বেশ কয়েকজন আহত হয়। ঘটনার পর পুরো পতেঙ্গা ইপিজেড এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাবিক কলোনী গেইট বন্ধ করে দিয়েছে নৌ বাহিনীর নিরাপত্তা কর্মীরা।
সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, একটি মসজিদসহ দুই স্থানে বোমা বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলের আশেপাশের থেকে আরো ৩টি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে। আহতদের মধ্যেই কোনো একজনের শরীরে বোমা বাধা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। তবে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করছেন না। এমনকি ঘটনাস্থলে সাংবাদিক যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদেরকে আটকিয়ে দেয়া হয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে আলামত সংগ্রহের কাজ চলছিলো।