স্মৃতি এবং বাস্তবতা

স্মৃতি এবং বাস্তবতা

 

ছবি: রিমি রুম্মান।

রিমি রুম্মান: রেড লাইটে গাড়ি থামিয়েছি সবে। পথচারী একজন রাস্তা পার হতে হতে ঠিক সামনে এসে দাঁড়ালেন। বললেন, “তুমি কি সোজা রাস্তা ধরে যাবে? ওদিকে হাসপাতালের সামনে নামিয়ে দিতে পারবে ?”
বললাম, “ঠিক আছে, উঠে বসো”।
তিনি বসলেন খুব ধীরে। কাঁপা কাঁপা হাতে সিট বেল্ট লাগালেন। ঠোঁটে লিপস্টিক, নখে নেইল পলিস। বেশভূষায় আভিজাত্যের ছাপ। কুঁচকে যাওয়া শরীর দেখে বলা যায় তিনি শতবর্ষ পেরিয়েছেন। আমাদের কথা হয়েছে সামান্যই। হাসপাতালে নিয়মিত চেকআপে যাচ্ছেন। আমার সময় নষ্ট করেছেন বলে সরি বললেন। ধন্যবাদ দিলেন যাবার সময়।

আমি যাচ্ছি ব্রডওয়ে ধরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে এই প্রথম মনে হলো বিষয়টি চমৎকার। কন্‌কনে শীতের সকালে শতবর্ষী এক বৃদ্ধা একাকি হাসপাতালে যাচ্ছেন নিয়মিত চেকআপে। কোন নির্ভরশীলতা নেই। জবাবদিহিতা নেই। স্বনির্ভর, স্বাধীন এক জীবন।

মনে পড়ে গেলো___

চেনা এক ভাবীর দেশ থেকে শ্বশুর শাশুড়ি বেড়াতে এসেছেন এক গ্রীষ্মে। শাশুড়ি দেশে চাকুরীজীবী। দু’মাসের ছুটি নিয়ে এসেছেন। নতুন দেশ, নতুন জায়গা। ঘরে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই হাঁটতে বের হন একাকি। বাঙালি এলাকা, বিধায় অনেক বাঙালিদের সাথে দেখা হয়। গল্প করেন। হাসিখুশি ঘুরে বেড়ান।

সেই ভাবীর সাথে এক বিকেলে পার্কে দেখা হলে শশুর শাশুড়ির কুশলাদি জানতে চাই। তিনি কিঞ্চিত বিরক্তিতে বলেন, ” এই বয়সে ঘরে বসে আল্লাহ্‌ বিল্লাহ্‌ করবে, তা-না শুধু বাইরে ঘুরে বেড়ানোর স্বভাব… “

ছেলে, বউ, নাতি, নাতনি পরিবেষ্টিত আনন্দময় সেইসব সোনালি সময় হারিয়ে যাচ্ছে সময়ের সাথে সাথে। এর চেয়ে আজ সকালে দেখা বৃদ্ধার একলা চলা’টা বেশ লাগলো।

[লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহীত]

অতিথি লেখক