আবহাওয়া অধিদপ্তরের সম্প্রসারণ জরুরী
মানব কল্যানে আবহাওয়া বিজ্ঞানের প্রয়োগে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার নীরিখে ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা। এই সংস্থা-ই ১৯৩৯ সালে আন্তর্জাতিক আবহাওয়া সংস্থা (আই এম ও) এর স্থলে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডাব্লিউ এম ও) গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উক্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে (ডাব্লিই এম ও) এর কনভেশন তৈরী হয়। কনভেশনের ভিত্তিতে ১৯৫০ সালে ২৩ মার্চ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫১ থেকে এই সংস্থা জাতিসংঘের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ অন্যান্য সংস্থার মতো-ই পৃথক ও স্বায়ত্ব-শাসিত একটি আন্তঃসরকার ব্যবস্থা।
জাতিসংঘের সঙ্গে এবং অর্থনৈতিক পরিষদের সমন্বয় মূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে একে অপরের পারস্পারিক সহযোগিতায় এই কাজ করে আসছে। আবহাওয়া বিজ্ঞান ও পানি বিজ্ঞানের উন্নয়নে আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা ও মানব কল্যাণে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আত্মপ্রকাশের দিন বিশ্ব ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সেই সুবাদে ২৩ মার্চ কে বিশ্ব আবহাওয়া দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সদস্য পদ লাভ করে। বিশ্ব আবহাওয়া দিবসের এবছরের প্রতিপাদ্য ‘অধিকতর উষ্ণ, শুষ্ক, সিক্ত : আগামীর মোকাবেলা’।
আবহাওয়া জলবায়ু কোন দেশের রাজনৈতিক বা ভৌগলিক সীমা-রেখায় আবদ্ধ থাকে না। তাই আবহাওয়া এবং পানি বিজ্ঞানের উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অপরিহার্য। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা সুনিপুণভাবে এই সহযোগিতা সমন্বয় করে আসছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মান অনুযায়ী আবহওয়া পানি সম্পদ এবং জলবায়ু বিষয়ক তথ্যাবলী সদস্য রাষ্ট্যগুলোর মধ্যে নিয়মিত বিনিময়ে সমন্বয় সাধন ও সেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে জাতি গোষ্ঠী এবং বিশ্ব পরিমন্ডলের কল্যাণ ও নিরাপত্তা বিধান-ই বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মৌলিক উদ্দেশ্য।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার নেটওয়ার্কে রয়েছে বিভিন্ন আবহাওয়া উপগ্রহ ১০,০০০ ভূ-পর্যবেক্ষণাগার,৩০০ নোঙ্গরকৃত বয়া,৬০০০ ভাসমান বয়া এবং ৩০০০ এয়ারক্রাফট। ডাব্লিউএমও এসবের প্রদত্ত আদর্শ মানের আবহাওয়াগত এবং সামুদ্রিক তথ্য ও উপাত্ত সময়মতো সংগ্রহ প্রকৃয়াজাতকরণ এবং বিতরণে বিশ্ব আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে সমন্বয় সাধন করে। এ কার্যক্রমে বিশ্বব্যাপী ৩টি বিশ্ব আবহাওয়া কেন্দ্র,৩৪টি আঞ্চলিক বিশেষ আবহাওয়া কেন্দ্র,১৮৫টি জাতীয় আবহাওয়া সার্ভিসেস কাজ করছে। এ কাজের মধ্যে রয়েছে সঠিক সময়ে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১৫ লক্ষাধিক ডাটা ক্যারেকটর প্রকৃয়াজাতকরণ ও বিতরণ এবং ২০০০ আবহাওয়া মানচিত্র তৈরী করা।
১৯৭৯ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা বিশ্ব জলবায়ু কার্যক্রম চালু করে। এল নিনো ৩’শ সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ব্যতিক্রমী পরিবর্তনের বিজ্ঞান ভিত্তিক দক্ষ পূর্বভাষ প্রদান এই কার্যক্রমের আওতাভুক্ত। বিগত দশকগুলোতে এল নিনো এবং জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়ে পরিনত হয়েছে।
বায়ু প্রবাহ হচ্ছে পৃথিবীর নিঃশ্বাস। অথচ বায়ু দূষণ ও গ্লোবাল ওর্য়ামিং এর কারণে পৃথিবীর প্রাণী ও জীব জগৎকে টিকিয়ে রাখতে এবং নির্মল বায়ুতে নিঃশ্বাস গ্রহণের জন্য সকল জ্ঞান ও সেবা প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে,জাতীয় আবহাওয়া সংস্থা সমুহের নেটওয়ার্ক। একইরূপে বাংলাদেশে আবহাওয়া অধিদপ্তর কার্যকর ভূমিকা রাখছে। যদিও তাদের সেই ভূমিকা অধিকাংশ ক্ষেত্রে-ই সন্তোষ জনক নয়! ঘটে যাওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় সিডর/আইলা কিংবা এধরণের ভয়াবহ ঘটনার পূর্ববর্ত্তী ঘোষনায় বাংলাদেশ আবহওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকা ছিলো অপ্রতুল। যার খেসারতে দেশের উপকূলীয় দক্ষিণাঞ্চলসহ সারা দেশের ক্ষতি হয়েছে সমীহীন। প্রাণহানী ঘটেছে অগণিত নীরহ মানুষের। ফসলের ক্ষতির হিসেব অদ্যাবধি নিরুপম করা যায়নি। সেক্ষেত্রে আবহওয়া অধিদপ্তরের অত্যাধুনিক যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন এবং অভিঙ্গতা সম্পন্ন ব্যকিবর্গকে অবিলম্বে নিয়োগ দেয়া জরুরী।
বাংলাদেশে আবহাওয়া থাক প্রায়শ: প্রতিকূল। ১৮৭৬,১৯৭০, ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ এর বন্যায় মানুষের প্রাণহানী,সম্পত্তি,শস্য,গবাদিপশুর ক্ষয়-ক্ষতি ছিলো বর্ণনাতীত। তাই জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব অপরিসীম। একই সংগে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এবং তার নেটওর্য়াকে রাডার,ভূ-উপগ্রহ, স্টেশন, আবহাওয়া পূর্বাভাষ ও সর্তকবাণী, ঘূর্ণিঝড় মনিটরিং ইত্যাদির প্রায়োগিক সার্ভিস অত্যন্ত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ। একবিংশ শতাব্দীতে এই গুরুত্বের গতিধারা হবে আরো গতিশীল। আবহাওয়া বিজ্ঞানের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্ববাসীকে সজাগ করার নিমিত্তে অন্যান্য ডাব্লিও এমও সদস্য রাস্ট্রের মতো বাংলাদেশও পালন করে যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে বিশ্ব আবহাওয়া দিবস।
দিবসের কর্মসূচিতে থাকে র্যালী, সেমিনার, চার্ট ও যন্ত্রপাতি প্রদর্শনী। দিবসকে সাজানো হয় মূল কিছু প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপর ভিত্তি করে। আজকের দিনে সকলের প্রত্যাশা সম্প্রসারিত রূপে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিব্যপ্তি বৃদ্ধি ঘটুক। মানব কল্যাণে ফলপ্রসু ভূমিকায় থাকুক আবহাওয়া অধিদপ্তরের কার্যপরিধি।
[শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।]