সম্ভাবনার আলো নিয়ে আবারো এলো বৈশাখ
নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কমঃ আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৩। বাংলা নতুন বছরের শুরু। বাঙালির মনে সম্ভাবনার আলো জ্বালাতে আবারো এলো বৈশাখ। নতুন বছরের প্রথম আলো পাঠায় নতুন স্বপ্নের হাতছানি। ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/ শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ্বল নির্মল জীবনে’ পহেলা বৈশাখ— একটি নতুন বছরের সূচনা। প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা নতুন বছর যেন বয়ে আনে শুভ্রতা, মঙ্গলবারতা।
প্রতি বছরই আমরা দুবার নতুন বছরকে উদযাপন করি। দু’ভাবে। ইংরেজি মাস আমাদের কেজো মাসের হিসাব। বাচ্চার স্কুলে নতুন ক্লাস, দেয়ালে নতুন ক্যালেন্ডার, বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়াবে কি বাড়াবে না-এ নিয়ে মনের মাঝে দোলাচল। এসবের হিসাব-নিকাশ করতে করতেই স্বাগত নতুন বছরকে। কিন্তু পহেলা বৈশাখ ভিন্ন দ্যোতনা নিয়ে আসে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে তীব্র আবেগ কাজ করে সবার মনে? বাংলাদেশি বাঙালিদের কাছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন আত্মপরিচয় সন্ধানের নাম।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলেও ঢাকায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়েছিল বাঙালি সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে উঠেছিল একটি আন্দোলন। ছায়ানট যার কাণ্ডারি।
বাংলা সন গণনা শুরু হয়েছিল ফসলের হিসাবেই। মহামতি সম্রাট আকবরের আমলে আরবী ‘সনহ্’, যার অর্থ শতাব্দ বা অব্দ, থেকে বাংলা সন হয়েছে। এই ‘বাংলা সন’ এর নাম প্রথমে ছিল ‘ফসলি সন’। কিন্তু সেই সন গণনা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের ফসল উত্পাদন ও জীবনযাত্রাকে অবলম্বন করেই। সেসময় বাংলা সনের শুরুর দিন এই পহেলা বৈশাখ উত্সবে মেতে উঠতো এ অঞ্চলের মানুষ। সেই আনন্দধারা এখনো বহমান। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য দিল্লির সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ থেকে প্রবর্তন হয়েছিল বাংলা সালের। বর্ষ শুরুর সেই দিনটিই এখন বাঙালির প্রাণের উত্সব। বাদশাহ আকবরের ‘নবরত্ন সভার’ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ফসলি সালের শুরু করেছিলেন, হিজরি চান্দ্রবর্ষকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেছিলেন ও পয়লা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেছিলেন।
পয়লা বৈশাখের দিনে উত্সবের শুরুটা সেই মোগল আমলেই। এ দিনে তিনি মিলিত হতেন প্রজাদের সঙ্গে। সবার শুভ কামনা করে চারদিকে বিতরণ করা হত মিষ্টি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বর্ষবরণ উত্সব চলে আসে জমিদার বাড়ির আঙিনায়। খাজনা আদায়ের মত একটি রসহীন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল গান-বাজনা, মেলা আর হালখাতার অনুষ্ঠান। দেশের সাধারণ ব্যবসায়ী মহলে ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান মানে নতুন অর্থবছরের হিসাব খোলা। নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে নতুন একটি ‘লাল কভারের’ খাতায় হিসাব খুলে নতুন উদ্যমে শুরু করা হয় ব্যবসা।
রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ বাংলা গান, কবিতা, শোভাযাত্রা, নাচসহ নানা আয়োজনে দিনটিকে উদযাপন করবেন। দিনটি সাধারণ ছুটি। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। সকল সরকারি ও বেসরকারি টিভি ও রেডিও অনুষ্ঠানমালা সমপ্রচার করছে। পাঁচটি বিভাগীয় শহর, ঢাকা মহানগর, দেশের সকল জেলা ও উপজেলায় পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বর্ণিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।