উপলব্ধি, পরম বেদনার!
প্রণব মজুমদার: কেন যে ভাল মানুষগুলো দ্রুত চলে যায়! তাও আবার নিঃশব্দে প্রস্থান। আমি বুঝি কত কষ্টকর অন্তিম মুহূর্তগুলো! বিশেষ করে ক্যান্সার আক্রান্ত প্রিয় মানুষগুলোর। আমি হারিয়েছি অমূল্য রত্নকে এইতো সেদিন। স্ত্রী ক্যান্সারে চলে গেলো ধরে রাখতে পারলাম না। প্রায় দেড় বছর নিকটজনেরও অবজ্ঞা আর বঞ্চনা আমাকেও সইতে হয়েছে। জীবনের সব উপার্জন এক ফুতকারে চলে গেলো। ৬৫ লাখ টাকা খরচ হলো। পাহাড়সম ঋণ এবং জমানো শেষ সম্বল ছিলো খরচের উৎস। শুধু শরীরী মানুষটিকে ধরে রাখার জন্য একা আমার কতো প্রাণান্তকর চেষ্টা। সরকারের সংগে ঘনিষ্ট সাংবাদিক নেতাদের কাছে ধরনা। টিনের থালায় ৫০ হাজার টাকা অনুদান। তাও আবার ৮ মাস অপেক্ষা। অথচ পা ভেংগেছে তার জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ। সুবিধাভোগী প্রভাবশালী নেতাদের মঞ্চায়নে সাহায্য গ্রহীতার অসহায়ত্বের মেলোড্রামা! মৃত্যু যখন কাছে এসে দাঁড়ালো তখন ইউনিয়েনের নেতাদের কৃপায় ১ বছর ২ মাস পর মিললো ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য তথ্য মন্ত্রনালয়ের দেয়া মাত্র ১ লাখ টাকা। এখানেও নাটক। রোগ সেরে গেছে অথচ মেয়ের জন্য একজন সাংবাদিক পেলেন ২ লাখ টাকা।
সাংবাদিক মুকুলকে চিনি সাপ্তাহিক বিচিন্তায় কাজ করার সুবাদে। মুকুল তালুকদার অনেকদিন থেকে ক্যান্সার আক্রান্ত ছিলেন। আজ (১৮/৫/২০১৬) তিনি ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুর সন্নিকটে এসে বেশ অসময়ে তিনি পেযেছেন প্রধানমস্ত্রীর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার অনুদান চেক। আর বঞ্চনা সেতো ক্যান্সার রোগীদের দুঃখময় অধ্যায়! যখন এ রোগে আক্রান্ত হলো আমার শিক্ষিতা স্ত্রী, তখন ওর আর আমার পয়সাওয়ালা প্রিয়জনরাও দুরে সরে গেলো। চেয়ে চেয়ে দেখলাম আপনজন রোগীকে কিভাবে এড়িয়ে চলছে পয়সাওয়ালারা। যে পাত্রে স্ত্রী খাবার খেতো, আমি এবং আমাদের একমাত্র কন্যা ছাড়া কেউ সেটা স্পর্শ করতো না! অথচ ক্যান্সার ছোয়াচে নয়। প্রিযজনদের অবহেলা এবং মানসিক নির্যাতনে বউ মুত্যুর আগে বলেছিলো, ‘বিবাহের আগে তো শুধু অবহেলাই পেয়েছি। তুমি সবই পূর্ণ করেছো! এবার একটা জিনিস দাও। বিষ!’ আমার মনে হয় মুকুলের অবস্থাও সে রকমই হয়েছিলো ।
আমি আমার শত্রুরও কর্কট রোগ চাই না। মুকুল তোমার প্রতি ভালবাসা যেখানেই থাক ভাই। তোমার আত্মা শান্তি পাক।
লেখক: প্রণব মজুমদার [সাংবাদিক]
{লেখাটি,লেখকের ফেসবুক ষ্ট্যাটাস থেকে নেয়া।}