অধিক রাজস্ব ও অকাল মৃত্যু রোখে তামাকপণ্যে বাড়তি করারোপ প্রয়োজন
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্কঃ ২৪ মে (মঙ্গলবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে প্রজ্ঞা ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স -আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এইড ফাউন্ডেশন, অধীর ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসিডি, ইপসা, সীমান্তিক, উবিনীগ, ইসি বাংলাদেশ, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, নাটাব, বিসিসিপি ও প্রত্যাশা সম্মিলিতভাবে ‘কেমন তামাক-কর চাই’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক এবং এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স- আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরন। সংবাদ সম্মেলনে অতিথিদেও মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুলমালিক, প্রতিষ্ঠাতা এবং সভাপতি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ; মর্তুজা হায়দার লিটন, চিফ ক্রাইম করেসপন্ডেন্ট, বিডিনিউজ২৪.কম এবং কনভেনর, আত্মা; এডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, টেকনিক্যাল এডভাইজার, দি ইউনিয়ন; ডা. মাহফুজুল হক ভুঁইঞা, গ্রান্টস ম্যানেজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে); হেলাল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক, প্রত্যাশা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ৪ কোটি ১৩ লক্ষ (GATS, ২০০৯) প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক সেবন করেন, যার মধ্যে ২৩% (২ কোটি ১৯ লক্ষ) ধূমপানের মাধ্যমে তামাক ব্যবহার করেন এবং ২৭.২% (২ কোটি ৫৯ লক্ষ) ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করেন। ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারের হার নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। বাংলাদেশে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের প্রায় ৭% (GYTS, ২০১৩) কিশোর-কিশোরী তামাক ব্যবহার করে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর প্রায় ১ লক্ষ (IHME, ২০১৩) মানুষ অকাল মৃত্যু বরণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, তামাকখাত থেকে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় তামাক ব্যবহারের কারণে অসুস্থ রোগীর চিকিৎসায় সরকারকে স্বাস্থ্যখাতে তার দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় করতে হয়। তামাকজনিত মোট ক্ষয়ক্ষতি হিসেব করলে তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রায় ৩ শতাংশ। বাংলাদেশে তামাকের উপর শুল্ক-কাঠামো অত্যন্ত জটিল যেমন: সিগারেটের ক্ষেত্রে মূল্যস্তর প্রথা, বিড়ির ক্ষেত্রে অতি স্বল্পমাত্রার ট্যারিফ ভ্যালু, গুল-জর্দার ক্ষেত্রে এক্স-ফ্যাক্টরি প্রাইস ইত্যাদি প্রথা চালু থাকায় দেশে তামাকের ব্যবহার ও ক্রয়-ক্ষমতা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৪ সালের তথ্য বলছে, পৃথিবীর যেসব দেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত সস্তা বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে ২০১৬-১৭ বাজেটকে সামনে রেখে তামাকপণ্যে করারোপ বিষয়ে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ তুলে ধরা হয়:
১. সিগারেটের করারোপের জন্য ব্যবহৃত মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিতে হবে, এই মূলস্তর প্রথা কর ফাঁকির অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ একটি বহুজাতিক তামাক কোম্পানি (বিএটিবি) মধ্যম স্তরের সিগারেট নি¤œস্তর হিসেবে দেখিয়ে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। করারোপে স্তরভিত্তিক প্রথা চালু থাকায় এধরনের ঘটনা ঘটছে;
২. সব ধরনের সিগারেটের উপর একই হারে অর্থাৎ খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে;
৩. বিড়ির উপর খুচরা মূল্যের ৪০ শতাংশ সমপরিমাণ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে;
৪. জর্দা এবং গুলের উপর খুচরা মূল্যের ৭০ শতাংশ সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ ট্যাক্স আরোপ করতে হবে;
৫. আয় এবং সময়ের সাথে সঙ্গতি রেখে প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধির জন্য তামাকপণ্যের মূল্য বাৎসরিক সমন্বয় করতে হবে;
৬. খাদ্য নিরাপত্তা সুসংহতকরণে তামাকের ওপর বিদ্যমান রপ্তানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীত করা;
৭. তামাকের চুল্লি প্রতি বাৎসরিক ৫ হাজার টাকা লাইসেন্সিং ফি আরোপ করা;
৮. তামাকের কর প্রশাসন শক্তিশালী করা, কর সংগ্রহ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং কর ফাঁকি রোধকল্পে তামাকপণ্যের শুল্কমুক্ত বিক্রয় প্রথা তুলে দিয়ে করারোপ করা;
৯. তামাকপণ্যের উপর ২% স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ করা। এখান থেকে আদায়কৃত অতিরিক্ত রাজস্ব আয় তামাক নিয়ন্ত্রণ এবং অসংক্রামক রোগ মোকাবেলায় ব্যয় করা।