ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: ৩০ জুন ঐতিহাসিক সাঁওতাল বিদ্রোহ দিবস। সাঁওতাল বিদ্রোহ হচ্ছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও তার এদেশীয় দোসর, শোষক, সুদখোর মহাজনদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র গণসংগ্রাম। ১৮৫৫ সালের এই দিনে সাঁওতাল আদিবাসীরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক, জমিদার ও মহাজনদের শোষণ থেকে মুক্তি পেতে ভারতের দামিন-ই কোহ অঞ্চলের পাকুড় জেলার ভগনাডিহি গ্রাম থেকে সাঁওতাল নেতা সিধু, কানু এবং তাদের বোন ফুলমণির নেতৃত্বে সাঁওতাল বিদ্রোহ শুরু হয়।
…
শত শত বছর ধরেই মহাজনরা চক্রবৃদ্ধি হারে ঋণের সুদ এবং নানা কৌশলে নিরীহ সাঁওতালদের দাসে পরিণত করেছিল। এসবের বিরুদ্ধে তারা বিদ্রোহ করেছিল দাসত্ব থেকে মুক্তি এবং ভূমির ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৮১১, ১৮২০ এবং ১৮৩১ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও এ বিদ্রোহ তীব্র আকার ধারণ করে ১৮৫৫ সালে। এই দিনে সাঁওতাল নেতা বীর সিংহকে পাকুর রাজার কাছারিতে ডেকে নিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। এ ঘটনায় সাঁওতালরা বিদ্রোহ শুরু করে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহে প্রায় ১০ হাজার সাঁওতাল প্রাণ দেয়। বিদ্রোহে ওই এলাকার দরিদ্র বাঙালি ও হিন্দু মুসলমান কৃষকেরাও অংশ নেন। এ বিদ্রোহকে দমন করার জন্য ব্রিটিশ সরকার কয়েক দফা সামরিক অভিযান চালায়। ব্রিটিশ বাহিনীর কামান-বন্দুক ও গোলাবারুদের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের তীর-ধনুক, বল্লম-টাঙ্গির অসম যুদ্ধ খুব বেশি দিন স্থায়ী না হলেও এই বিদ্রোহ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিকামী মানুষের মনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে কাজ করেছে। সাঁওতাল বিদ্রোহের এক বছর পরই ভারতে সংঘটিত হয় সশস্ত্র সিপাহী বিপ্লব।
…
সেদিন সাঁওতাল আদিবাসীদের ডাকে নিপীড়িত ও অধিকারবঞ্চিত মানুষ সংঘটিত করে অধিকার আদায়ের এক বিপ্লবী গণঅভ্যুত্থান। কিন্তু আজ দেড়শ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ভূমির ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।