সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত

সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিস: দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত

নিজস্ব প্রতিনিধি,এসবিডি নিউজ24 ডট কম: সাভার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে টাকা হলেই মিলছে দলিল। খাজনা, খারিজ, পর্চা, রেকর্ড, চৌহুদ্দি ঠিক না থাকলেও টাকার বিনিময়ে হচ্ছে জমি রেজিস্ট্রি। কতিপয় দলিল লেখক ও হাউজিং কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশ করে সাব-রেজিস্ট্রার জমির শ্রেণি বদল করে আন্ডারভেল্যুর পাশাপাশি রেজিস্ট্রিতে ‘নয়ছয়’ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দলিল লেখক সমিতির ১১ সদস্যের কমিটির সভাপতিসহ অধিকাংশ সদস্য অনির্বাচিত হওয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার তাদের কয়েকজনকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন সিন্ডিকেট।


গত ১৯ ফেব্রুয়ারি (রোববার) একটি জাতীয় দৈনিকের শেষের পাতায় ‘সাভারে আন্ডারভেল্যু দলিলে সরকারের কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে তা ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়। বিক্রি হয় সংবাদের ফটোকপি। সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম ওই দিন সকালেই দলিল লেখক সমিতির কমিটির লোকজন নিয়ে বৈঠক করে বলেন, আপাতত আন্ডারভেল্যু দলিল করা যাবে না। সমস্যা হতে পারে। তিনি তাদের বিকল্প পথ বের করারও পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। এর পরই দুপুরে ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিস্ট্রার (আইজিআর) আবদুুল মান্নান সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান এবং দুর্নীতি, অনিয়ম ও রাজস্ব কমে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার পরও সাভার রেজিস্ট্রি অফিসের দোতলার ছাদ নির্মাণ না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন। দুপুরের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক কর্মকর্তা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান রাজস্ব কমে যাওয়ার খোঁজ খবর করতে। এ ছাড়া একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও অনিয়মের খোঁজ খবর করতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।


একাধিক দলিল লেখক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘এখানে সিন্ডিকেট করে সব চলছে। সিন্ডিকেটের সদস্য হলে পর্যাপ্ত কাগজপত্র না হলেও দলিল রেজিস্ট্রি হয়। এ ছাড়া চুক্তিতে হয় সব ধরনের দলিল।’ দলিল লেখকদের অভিযোগ, সমিতির সদস্যদের মধ্যে সভাপতিসহ ৮ জন নির্বাচিত না। যারা রাজনৈতিক নেতাদের নাম ভাঙিয়ে সমিতির বিভিন্ন পদ দখল করে বসে আছেন তারাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত। এতে ভোগান্তি ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কমছে সরকারের রাজস্ব।


অপরদিকে সাভারে ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানের (ড্যাপ) মধ্যকার জমি হরহামেশা যাচাই-বাছাই না করেই রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। এতে সরকারের পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধপূর্ণ অর্পিত সম্পত্তি, খাস খতিয়ানভুক্ত জমি এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন জমিও সাভারে রেজিস্ট্রি হচ্ছে। এসব কারণে দিন দিন স্থানীয় বিরোধ বাড়লেও টনক নড়ছে না সংশ্লিষ্টদের। একাধিক সূত্র মতে, সাব-রেজিস্ট্রারের খাস কামরায় ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে নিয়োজিত ইব্রাহীম ও রহিম কোনো সরকারি স্টাফ নন। তারা সাব-রেজিস্ট্রারের ‘ব্যক্তিগত কর্ম সম্পাদন ও কালেনশন’ করে থাকেন। সরকার গুরুত্বপূর্ণ অফিসে এমন দুজনের অফিস সময়ে ও গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করা নিয়ে খোদ দলিল লেখকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। করণিক (কেরানী) ছাড়াও নকল নবিশকারকদের মধ্যে রয়েছে সাব-রেজিস্ট্রারের পছন্দের স্টাফ।


এ সব ব্যাপারে কথা বলতে সাব-রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে এড়িয়ে যান। সাভার দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সভাপতি দাবিদার আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব তার কিছুই জানা নেই। তিনি অন্য কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। সাভার দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলীম দাবি করেছেন, সেখানে কোনো ধরনের অনিয়ম নেই। নিয়মের মধ্যেই সব হচ্ছে।

নিজস্ব প্রতিনিধি