একটি নির্দোষ প্রশ্ন!
শাহানা হুদা রঞ্জনা: চোখের সামনেই দেখলাম আশেপাশের অনেকগুলো একতলা মসজিদ ৪ থেকে ৫ তলা হয়ে গেল। প্রায় প্রতিটিতেই পাখার সাথে সাথে এসিও লেগে গেছে। আলোরও কোন অভাব নেই। চারিদিকে টাইলস, মোজাইক নকশা দিয়ে সাজানো হয়েছে। মাইক লেগেছে ১/২ টার জায়গায় ৪/৫ টি । মিনার উচুঁ থেকে উঁচুতর হয়েছে।
…
মসজিদের খরচ চালানোর জন্য মসজিদ ঘিরে বড় বড় মার্কেটও তৈরি হয়েছে। ব্যাপারটা ভালই। আগে পাড়া-মহল্লার লোকেরা মাসে মাসে চাঁদা দিয়ে মসজিদের ব্যয়ভার বহণ করতেন। এখন মসজিদগুলোর নিজেদেরই আয় আছে। মানুষের সংখ্যা ও টাকা বেড়েছে, মসজিদে দান করার হারও বেড়েছে। কাজেই ছোটখাট চাঁদার দরকার হয়না।
…
তবে অপ্রিয় হলেও একথা সত্য যে – জুম্মাবার, ঈদের জামাত ও রমজানে তারাবির সময় ছাড়া অধিকাংশ মসজিদের ২ থেকে ৪ তলা খালিই পড়ে থাকে। মানুষের টাকা বাড়লে, মানুষ পুণ্যের আশায় মসজিদে দান করেন। অবশ্য এদের অনেকেই হয়তো নামাজ আদায় ফরজ হওয়া সত্ত্বেও, নামাজ আদায় করেননা কিন্তু মসজিদে দান করেন। অধিকাংশ মানুষই শিক্ষা বা স্বাস্থ্যখাতে দান না করে, মসজিদেই দান করেন, ডাইরেক্ট সোয়াবের আশায়। যদিও একজন দুষ্টু মানুষ বলেছে, বড়লোকরা এসি ছাড়া নামাজ পড়তে পারেনা, কষ্ট হয়। আর তাই নাকি সবচেয়ে আগে মসজিদে এসি লাগিয়ে দেন। যাক, আমরা এসব দুষ্টু লোকের কথায় কান না দেই।
…
পূণ্যের আশায় মানুষ আজকাল এই খাতে এত টাকা দান করে যে মসজিদ কমিটির কোন অভাব থাকেনা, কিন্তু প্রশ্ন হলো এইসব বড় বড় মসজিদে প্রকৃত নামাজির সংখ্যা কত? সেই অভাবতো থেকেই যাচ্ছে। হঠাৎ একথাটি মনে হওয়ার কারণ হল, পত্রিকায় দেখলাম সরকার ৯ হাজার ৬২ কোটি টাকায় (৮,১৭০ কোটি দেবে সৌদি সরকার ) সারাদেশে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ বানাবে। খুব ভাল কথা। কিন্তু সেই সাথে “মডেল মানুষ বা আদর্শ মানুষ” বানানোর কোন পরিকল্পনা কি আছে সরকারের বা অন্য কারো?
[শাহানা হুদা রঞ্জনা: মানবাধিকার কর্মী]