সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ‘নিরুৎসায়িত’ করার উদ্যোগ

সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ‘নিরুৎসায়িত’ করার উদ্যোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ24 ডট কম: সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিশেষ করে পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা বেঁধে দেয়ার পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে হলে অর্থের উৎস জানাতে হবে। এছাড়াও পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্র ছাড়া বাজারে প্রচলিত আরো দু’ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।


সূত্র জানায়, ব্যাংক আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার বেশি হওয়ায় বেশ কয়েক বছর ধরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়ে গেছে। গত এক বছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি যে হারে বেড়েছে তা সরকারের পক্ষ থেকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। যেমন সদ্য সমাপ্ত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৬০ হাজার ৫১৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার, যা এর আগের অর্থাৎ ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৪০ দশমিক ৩৯ ভাগ বেশি। এ সময় সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ছিল ৪২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা, যা ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে একই সময়ে (জুলাই-এপ্রিল) ছিল ২৬ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। অন্যদিকে গত অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৬১০ কোটি টাকা।


সূত্র জানায়, এ পরিস্থিতিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাতে সরকারের পক্ষ থেকে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিব এই নীতিমালা প্রণয়ন করছেন। নীতিমালার খসড়াটি চুড়ান্ত হয়েছে। চলতি মাসের যে কোনো এক সময় তা অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সঞ্চয়পত্র বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় সরকারের সুদের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। কারণ, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া সবচেয়ে ব্যয়বহুল। এ ক্ষেত্রে সুদের হার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া ঋণের সুদের হারের চেয়ে অনেক বেশি। তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে নিরুৎসায়িত করার জন্য আগামীতে বেশ কয়েকটি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এর একটি হচ্ছে, এ খাতে বিনিয়োগ করতে হলে অর্থের উৎস জানাতে হবে। কারণ, মনে করা হচ্ছে, সঞ্চয়পত্রে কালো টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। একে প্রতিরোধ করার জন্যই এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে পরিবার সঞ্চয়পত্র ও অবসরভোগীদের জন্য পেনশনার সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে সীমা আরোপ করা হবে। এছাড়া বাজারে থাকা পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর চিন্তা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মেয়াদান্তে সুদের হার হচ্ছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ মধ্যে প্রথম বছরে সুদ দেয়া হয় ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দ্বিতীয় বছরে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, তৃতীয় বছরে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং চতুর্থ বছরে সুদের হার হচ্ছে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ।


অন্যদিকে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার হচ্ছে মেয়াদান্তে ১১ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। এই দুই সঞ্চয়পত্র এক নামে ৩০ লাখ ও যুগ্ম নামে ৬০ লাখ টাকার পর্যন্ত কেনা যায়। অন্যদিকে পরিবার সঞ্চয়পত্র একক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র একক নামে ৫০ লাখ টাকার কেনা যায়।

সূত্র জানায়, সামাজিক সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে আগামীতে পরিবার ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হবে না। তবে এই সুদের হার সর্বোচ্চ ৫০ লাখ পর্যন্ত বিনিয়োগে কার্যকর থাকবে। অর্থাৎ একক বা যুক্ত নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সুদের হারের কোনো পরিবর্তন হবে না। এর বেশি কেউ বিনিয়োগ করলেও ৫০ লাখ টাকার ওপরে বিনিয়োগকৃত সঞ্চয়পত্রের সুদের হার পাঁচ বছর ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হারের অনুরূপ হবে। আগামীতে পাঁচ বছর ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে ৭ থেকে ৮ শতাংশ করা হবে।


অর্থমন্ত্রী গত ২৮ জুন অর্থবিল পাসের সময় জাতীয় সংসদে বলেছেন, মূলত ব্যাংক ব্যবস্থায় সুদের হার কমার কারণে সঞ্চয়পত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে সঞ্চয়পত্র থেকে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ঋণ নিতে হচ্ছে। ফলে সুদ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা সরকারের ব্যয় ব্যবস্থাপনার ওপর একটি বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ‘এমন বাস্তবতার বিষয়টি আমি বিভিন্ন ফোরামে উত্থাপন করেছি। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের সুদের হার নির্ধারণের কারণে কোনো পেনশনভোগী, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত কেউ যাতে উল্লেখযোগ্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি আমাদের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।’


অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সুদের হারের সঙ্গে মূল্যস্ফীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে, মূল্যস্ফীতি বাড়লে সুদের হার বাড়ে আর মূল্যস্ফীতি কমলে সুদের হার কমে। বিষয়টি তাই আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে। তবে আমরা চাচ্ছি সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তা যেন সঠিক ব্যক্তিরা পায়। এ জন্য আমরা এর একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করব যেখানে ক্রেতার জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যের সাথে সঞ্চয়পত্রের তথ্যকে সম্পৃক্ত করা হবে।

নিজস্ব প্রতিনিধি