পরলোকে কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাক

পরলোকে  কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাক

নিজস্ব প্রতিনিধি, এসবিডি নিউজ24 ডট কম: পরলোকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা নায়করাজ রাজ্জাক। ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ আগস্ট (সোমবার) বিকালে তার মৃত্যু হয়। গুলশানের নিজ বাসায় অসুস্থতাবোধ করলে হাসপাতালে নেয়া হয়। এই মহান অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।


বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতাল সূত্র জানায়, সোমবার বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে হার্ট অ্যাটাক হওয়া অবস্থায় নায়ক রাজ্জাককে হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সব ধরনের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। ৬টা ১৩ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তিনি নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি বাংলার প্রতিটি মানুষের মনের ঘরে প্রিয় নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন তার নিজ অভিনয় গুণে।


১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতার টালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। নীল আকাশের নীচে, নাচের পুতুল, রাজলক্ষী শ্রীকান্ত, বাবা কেন চাকর, ওরা ১১ জন ইত্যাদি সিনেমা দিয়ে খ্যাতি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক। পাঁচবার অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার সহ আরো বেশ কিছু আয়োজনে অর্জন করেন আজীবন সম্মাননা।


প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এই অভিনেতা। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। স্ত্রী লক্ষ্মী আর সন্তান বাপ্পারাজ (রেজাউল করিম), নাসরিন পাশা শম্পা, রওশন হোসাইন বাপ্পি, আফরিন আলম ময়না এবং সম্রাটকে নিয়ে ছিলো তার সংসার।


চার অক্ষরে লেখা হলেও রাজ্জাক নামের অধ্যায় যেন ব্যাখ্যাঅতীত। বাংলা চলচ্চিত্রকে অন্যন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এ মানুষটির জন্ম পশ্চিমবঙ্গের (বর্তমান ভারতের) কলকাতার টালিগঞ্জে । নায়করাজ রাজ্জাক নামে সুপরিচিত হলেও তার আসল নাম ছিল আব্দুর রাজ্জাক। কলকাতার খানপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্বরসতী পূজা চলাকালীন সময়ে মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার গেম টিচার রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লেখা নাটক বিদ্রোহীতে গ্রামীণ কিশোর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই নায়ক রাজের অভিনয়ে সম্পৃক্ততা।


তিনি ১৯৬৪ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাড়ি জমান। প্রথমদিকে রাজ্জাক তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে “ঘরোয়া” নামের ধারাবাহিক নাটকে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে জনপ্রিয় হন। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু অস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন-সহ আরও বেশ ক’টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে।তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।


রাজ্জাকের পথ ধরেই তার দুই ছেলে বাপ্পা রাজ ও সম্রাট ফিল্মের নায়ক হয়েছেন। কিন্তু তারা কেউই রাজ্জাকের অতীত সাফল্যের ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেননি। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। এর মধ্য দিয়েই তিনি অর্জন করেন নায়করাজ রাজ্জাক খেতাব। অর্জন করেন একাধিক সম্মাননা। এছাড়াও, রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন।


তার প্রযোজনা সংস্থা রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশন থেকে তিনি উল্লেখযোগ্য কিছু ছবি নির্মাণ করেছিলেন। উল্লেখযোগ্য হলো- আকাঙ্ক্ষা, অনন্ত প্রেম, পাগলা রাজা, বেঈমান, আপনজন, মৌচোর, বদনাম, সত্ ভাই, চাঁপা ডাঙ্গার বৌ, জীনের বাদশা, ঢাকা-৮৬, বাবা কেন চাকর, মরণ নিয়ে খেলা, সন্তান যখন শত্রু, আমি বাঁচতে চাই, কোটি টাকার ফকির প্রভৃতি।


১৯৭২ থেকে ’৮৯ সাল পর্যন্ত রাজ্জাক অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে—স্লোগান, আমার জন্মভূমি, অতিথি, কে তুমি, স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা, প্রিয়তমা, পলাতক, ঝড়ের পাখি, খেলাঘর, চোখের জলে, আলোর মিছিল, অবাক পৃথিবী, ভাইবোন, বাঁদী থেকে বেগম, সাধু শয়তান, অনেক প্রেম অনেক জ্বালা, মায়ার বাঁধন, গুণ্ডা, আগুন, মতিমহল, অমর প্রেম, যাদুর বাঁশী, অগ্নিশিখা, বন্ধু, কাপুরুষ, অশিক্ষিত, সখি তুমি কার, নাগিন, আনারকলি, লাইলী মজনু, লালু ভুলু, স্বাক্ষর, দেবর ভাবী, রাম রহিম জন, আদরের বোন, দরবার, সতীনের সংসার প্রভৃতি।


অন্ধ বিশ্বাস, সতীনের সংসার, জজসাহেব, বাবা কেন চাকর, পৃথিবী তোমার আমার, বাবা কেন আসামী, মরণ নিয়ে খেলা, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি, বাপ বেটার লড়াই, পিতার আসন, পিতামাতার, আকাশ ছোঁয়া ভালোবাসা, ভালোবাসার শেষ নেই, ও হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ।

নিজস্ব প্রতিনিধি