জ্বলছে রাখাইন, মরছে রোহিঙ্গা
…
রাখাইন রাজ্যে গত ২৪ আগস্ট রাতে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এরপর সেনাবাহিনীও বড় ধরনের পাল্টা অভিযান শুরু করে সেখানে। এর ফলে প্রায় ৫৮ হাজার ৬শ’ রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তাদেরকে মানবিক সাহায্য সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে ত্রাণকর্মীরা। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, দেশ ছাড়তে বাধ্য করতে সেনাবাহিনী তাদের ‘বাড়ি ঘরে আগুন দিচ্ছে এবং নির্বিচারে হত্যা করছে’। সংঘাতের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলিম নাফ নদী ও স্থল সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। জঙ্গল ও নদীপথে ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশে চেষ্টাকালে নৌকাডুবে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৪০ জনেরও বেশি রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
…
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইটে তোলা ছবি এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গদের বক্তব্যের ভিত্তিতে বলেছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে। সংস্থার এশিয়া অঞ্চলের উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেন, ‘স্যাটেলাইটে তোলা নতুন ছবিতে একটি মুসলিম গ্রামে পুরো ধ্বংস হয়ে যেতে দেখা গেছে। এ থেকে সেখানকার পরিস্থিতি যতটুকু খারাপ বলে প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল তার চেয়েও বেশি শোচনীয় হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
…
রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে চার শতাধিক রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনাকে মানবিক বিপর্যয় উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ। তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ করে অভিযান থেকে সরে আসতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে দেশটির উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক আকারে নির্যাতন ও উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে সে দেশের সেনাবাহিনী। বসতবাড়ি থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে পুড়িয়ে দেয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালিয়ে আসছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সহিংসতার শিকার হয়ে গত বছরের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে আসছেন। তাদের অনেকেই বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।