বালিশ সমাচার…

বালিশ সমাচার…
ছবি: জবরুল আলম সুমন।

জবরুল আলম সুমন: ঘুমে চোখ জড়িয়ে গেছে, আর জেগে থাকা সম্ভব না। বিছানার দিকে এগিয়ে যেতেই মেজাজ সপ্তমে চড়ে বসলো! বাচ্চার মা’কে চেচিয়ে বললাম বালিশ কই? সে মৃদু হেসে জয়ীর ভঙ্গিতে বললো ঘরে যে ক’টা বালিশ ছিলো সবগুলো বেচে দিয়েছে! লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে বালিশ কিনে নিচ্ছে! ৫০০ টাকার বালিশ ৫০০০ টাকা! একটু মূলামুলি করলে ৬/৭ হাজারেও কিনে নিচ্ছে! এই লাভের লোভ সামলানো যায়? তাঁর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি পাঁচশ টাকার কচকচে নোটের বাণ্ডিল! আমার দিকে বেশ কয়েকটি নোট বাড়িয়ে দিয়ে বললো দুটো বালিশের ব্যবস্থা করে আনতে।

চোখে রাজ্যের ঘুম চামড়ার নতুন নোটের ঘ্রাণে কখন যে হারিয়ে গেছে টেরই পাইনি। টাকাগুলো পকেটে ঢুকিয়ে পাড়ার বালিশ দিদিমণি’র দোকানের দিকে ছুটলাম। বালিশ তৈরি করা আর বিক্রি করাই হচ্ছে বালিশ দিদিমণি’র কাজ। তাঁর কাছে গেলে নিশ্চয়ই একটা ব্যবস্থা হবে। পাড়ার মাঝ গলিতে বালিশ দিদিমণি’র বালিশের যে ঝুপড়ি দোকান ছিলো তার ঝাপি লাগানো দেখে আঁৎকে উঠলাম। আশপাশের লোকজন বলাবলি করছে, বালিশ দিদিমণি কেমনে পারলো অধিক লাভের আশায় তাঁর দোকানটা রূপপুরে স্থানান্তর করতে!


মেজাজটা আবার খারাপ হয়ে গেলো! ঘরে ফিরে টিভি ছেড়ে হালকা হতে চাইলাম, এই সময়ে টিভি দেখা মানেই টক শো’র প্যানপ্যানানি সহ্য করা! কিন্তু এ্যাঁ আমি কী দেখছি টিভির পর্দায়? টকশোর টেবিল খালি পড়ে আছে, উপস্থাপক নেই, নেই আলোচকেরাও! স্ক্রলে লেখা ভাসছে “রূপপুরে বালিশ তোলার কাজে অধিক মুনাফা হওয়ায় উক্ত টকশো’র সকল আলোচক, উপস্থাপক, কলাকুশলীরা রূপপুরে চলে গেছেন।” উনারা সেখান থেকে ফিরলে আবার টকশো নিয়মিত সম্প্রচার হবে।


ঘটনার আকস্মিকতায় আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়! পরক্ষণেই সিদ্ধান্ত নিলাম আমিও রূপপুরে যাবো! একটি বালিশ তুললেই ৭৬০টাকা পকেটে ঢুকবে! দিনে যদি ১০০টা তুলতে পারি তাহলে দিন শেষে পকেটে জমবে ৭৬,৬০০ টাকা! লাভ আর লাভ!


অন্যদের তুলনায় আমি একটু বেশিই তুলছি! লাঞ্চের আগেই ৮০টা তোলা হয়ে গেছে, ভাবা যায়? সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই করছে, একে একে সবাই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে দিনের মজুরি গ্রহণ করার জন্য! একেকজন টাকা নিচ্ছে আর মহানন্দে লাফাচ্ছে! এবার আমার ডাক পড়লো, চোখে মুখে অন্যরকম এক আনন্দ নিয়ে পা বাড়াচ্ছি! ১২০টা বালিশ তোলার টাকা একসাথে হাতে পাবো, নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিনা, এই মহা আনন্দ প্রকাশ করতে সজোরে একটা লাফ দিতেই খাট থেকে পড়ে গিয়ে সত্যিকারের ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো! ধ্যাৎ, টাকাটা হাতে পাওয়ার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো! উফফ!!!


উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখে আমার রাতের ঘুমটা না হয় ভাঙলো কিন্তু উল্টাপাল্টা বাস্তবতা দেখেও যাদের দিনের বেলার ঘুম ভাঙ্গেনা তাদের ঘুম কি আদৌ ভাঙবে কিনা কে জানে!


জবরুল আলম সুমন: প্রাবন্ধিক।

অতিথি লেখক