রোহিঙ্গা সমস্যা: নিরসন জরুরী
শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি ও উদ্যোগ সম্পন্ন হওয়ার পরও থমকে গেল বহুলপ্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহের কারণে শেষ মুহূর্তে এসেও স্থগিত করা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বলছেন, পাঁচ দফা পূরণ না হলে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরবে না।
…
তাদের এই পাঁচ দফার মধ্যে রয়েছে : নাগরিকত্ব পাওয়া, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, জমিজমা ফেরত পাওয়া, নিজেদের গ্রামে বসবাস করার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং অবাধে চলাফেরা করার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। এ যাবৎ বিভিন্ন দফায় মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করা শরণার্থীর সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। দ্বিতীয় দফায় মিয়ানমার থেকে ৩ হাজার ৫৪০ জনের যে তালিকা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, তার কার্যক্রমও শেষ পর্যন্ত থমকে গেল।
…
এ মুহূর্তে খুব একটা জোর দিয়ে বলাও সম্ভব নয় যে, জট খুলতে কত সময় লাগবে। তবে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের হাতে সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গার তালিকা তুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে এ কথা আজ নতুন করে পুরোনো সত্যকে আবার প্রতিষ্ঠিত করল, মিয়ানমার তার দেশ থেকে গণহত্যার মতো নিকৃষ্টতম পথে ১১ লাখ মানুষকে দেশছাড়া করেছে। যাদের ফেরত নেয়ার প্রশ্নে তাদের ভাবনাটাও সহজ এবং সরল হতে পারেনি।
…
এদিকে রোহিঙ্গাদের অনাগ্রহকে দুঃখজনক উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এটা আমরা আশা করিনি। তবে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেবে না।’ তিনি আরো বলেছেন, রোহিঙ্গারা আস্থার অভাবে ভুগছে। এই আস্থার অভাব দূর করার দায়িত্ব বাংলাদেশের নয়। বাংলাদেশ তার সাধ্যমতো সবকিছুই করছে। আস্থার যে ঘাটতি রয়েছে তা মিয়ানমারকেই দূর করতে হবে। আমরা অপেক্ষায় থাকব। তিনি এও বলেছেন, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার প্রশ্নে রোহিঙ্গাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কারা প্ল্যাকার্ড বা লিফলেট করে দিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। তারা দাবি-দাওয়া উত্থাপন করেছে। তবে তাদের দাবির কাছে বাংলাদেশ জিম্মি হতে পারে না। এরই মধ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশ আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। আর বেশিদিন রোহিঙ্গারা এভাবে থাকতে পারবে না। মানবিক এ সংকট মোকাবিলায় দাতারাও আগের মতো আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের পক্ষ থেকে অর্থের জোগানও কমে আসবে। আর তখনই নতুন করে শুরু হবে সংকট।
…
সার্বিক বিবেচনায় সমস্যা কিছুটা হলেও জটিল হয়ে পড়ল। এখান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশকে নতুন কোনো পথের সন্ধান করতে হবে। আর এ কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাকে আরো ইতিবাচক এবং গতিশীল করতে হবে। আমরা দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধানে বিশ্বাসী। কিন্তু অনেক তো সময় গেল। আমরা সূর্যোদ্বয়ের কোনো নমুনা দেখতে পেলাম না। তাই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পাশাপাশি অন্য কিছুর কথাও ভাবার সময় এসেছে। সরকারসহ দেশের আপামর মানুষকে এই ভাবনার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে এগিয়ে আসতে হবে। যত কঠিনই হোক না কেন, আমরা নিশ্চয়ই এ সমস্যা সমাধানে সফল হব বলেই আমাদের বিশ্বাস।