চীনের কূটচালের শিকারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ?
আলী রিয়াজ: চীন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘প্রত্যাবাসনে’ বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ‘মধ্যস্ততা’ করার ‘আগ্রহ’ দেখিয়েছে; বাংলাদেশের পরাষ্ট্রমন্ত্রীর সংগে বাংলাদেশে চীনের নতুন রাষ্ট্রদূত দেখা করে আবার এই প্রস্তাব দিয়েছেন| রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কূটনীতির চালে চীন কতটা এগিয়ে আছে, এই নিয়ে চীন যে ‘দাবা খেলছে’ এটা বোঝার জন্যে এই তথ্যই যথেষ্ট| কেননা প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় চেষ্টা ব্যর্থ হবার পর যখন বাংলাদেশ ‘আন্তর্জাতিক সমাজের’ কাছে আরো বেশি ভূমিকার আবেদন করেছে সেই সময়ে চীন এই কথিত ‘মধ্যস্থতা’র কথা বললো| শরণার্থী বিষয়ে তৃতীয় পক্ষ যুক্ত হোক চীন কোনো অবস্থায়ই তা চায়না| কার্যত চীনের মধ্যস্থতায় দুই বার বাংলাদেশ-মিয়ানমারের বৈঠক হয়েছে – যার ফলাফল শূন্য| ফলে এটা কোনো নতুন প্রস্তাব নয়| রোহিঙ্গা ‘সমস্যা সমাধানের’ কথা না বলে কেবল ‘প্রত্যাবাসনের’ কথা বলার মধ্যেই আছে এই খেলার একটি চাল| অতীতে এই ধরণের কথাকে বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে, চীনের প্রণোদনায় দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে সই করেছে যা অনিবার্যভাবেই ব্যর্থ হয়েছে| বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার পরিণতি হচ্ছে বর্তমান পরিস্থিতি| চীন যদি এই প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তরিক হতো বা এখনো আন্তরিকতা দেখাতে চায় তবে তার করণীয় হচ্ছে মিয়ানমারকে অবিলম্বে সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা – চীন চাইলে তা করতে পারে| সমস্যার কারণগুলো সমাধান করা গেলে প্রত্যাবাসন কোনো সমস্যার বিষয় নয়| বাংলাদেশ এই ধরণের ‘মধ্যস্থতার’ প্রস্তাবের বিপরীতে চীনকে কি একথা জোর দিয়ে বলেছে? রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা বা চীনের বিনিয়োগের আকর্ষণকে প্রাধান্য দেয়ার কারণেই কি চীনের এই কূটচালের স্বেচ্ছাপ্রনোদিত শিকারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ?