ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আস্ফালন

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন: তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের আস্ফালন

শুভাশিস ব্যানার্জি শুভ: কয়েকদিন ধরে নানান নাটকীয়তা চলছিল। ছিল শঙ্কাও। সবশেষ ২৪ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ভোরে ইউক্রেনে সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া। সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা শুরু করে দেশটি। তিন দিকে ঘিরে রুশ বাহিনী আকাশে যুদ্ধবিমান, স্থলে ভারী যান আর নৌপথে রণতরী থেকে হানা দিতে দিতে রাজধানী কিয়েভের দিকে অগ্রসর হয়। সকালের দিকে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে কিয়েভ সেনারা। তবে রাশিয়ার সর্বগ্রাসী বাহিনীর সামনে দাঁড়াতে পারেনি তারা। রাত ১২টার দিকে রুশ বাহিনী কিয়েভের চার পাশ ঘিরে ফেলেছে। রাজপথ দখলে নিয়ে টহল দেয় রুশ ট্যাঙ্ক। রাত ২টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, এখন কিয়েভের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনা মোতায়েনের পর থেকে মস্কোর সঙ্গে পশ্চিমাদের সামরিক উত্তেজনা বাড়ছে। এ নিয়ে কয়েক মাস ধরে পাল্টাপাল্টি হুমকি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও কূটনৈতিক তৎপরতার পর বৃহস্পতিবার ভোরে রুশপন্থি বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত দোনবাসে ‘বিশেষ সামরিক অভিযানে’র ঘোষণা দেন ভদ্মাদিমির পুতিন। এরপরই আক্রমণ শুরু হয়। এতে আতঙ্কে দিজ্ঞ্বিদিক ছোটাছুটি করেন ইউক্রেনীয়রা। এরই মধ্যে খবর আসে শতাধিক মৃত্যুর। রুশ বিমান ভূপাতিতের দাবিও করে তারা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই যুদ্ধ অনায়াসে এড়ানো যেতো, যদি মার্কিন প্রশাসন/ন্যাটো ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়ার স্বাভাবিক নিরাপত্তা-উদ্বেগকে মেনে নিত। ন্যাটো ইউক্রেনকে তার সদস্য করতে চাইছে, যার অর্থ রুশ সীমান্তে থাকবে মার্কিন/ন্যাটোর বাহিনী, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র! বর্ষশেষের সাংবাদিক বৈঠকেও পুতিন সরাসরি প্রশ্ন তুলেছিলেন: ‘আমরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিতে চাই, পূর্ব দিকে ন্যাটোর আর কোনো অগ্রগতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আর এতে কী কোনো অস্পষ্টতা রয়েছে? আমরা কী মার্কিন সীমান্তের কাছে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করতে গিয়েছি? না, আমরা তো যাইনি। বরং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই তার ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আমাদের ঘরে এসেছে, দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দোরগোড়ায়। আমাদের ঘরের কাছে কোনো আঘাত করার ব্যবস্থা রাখা যাবে না, এই দাবি করা কী তাহলে ভুল হবে, খুব অস্বাভাবিক হবে?’

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, সোভিয়েত পতনের এক বছর আগে, তৎকালীন মার্কিন বিদেশসচিব জেমস বেকার রাশিয়ার কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, ‘ন্যাটো পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’, যদি মস্কো দুই জার্মানির মিলনে সম্মতি দেয়। পূর্বদিকে এক ইঞ্চি-ও নয় অর্থঃ পূর্ব বার্লিনের পূর্বে ‘এক ইঞ্চি-ও এগোবে না’ ন্যাটো। গর্বাচ্যভ সেই চুক্তিতে সহমত হয়েছিলেন। কিন্তু, ওয়াশিংটন তার কথা রাখেনি। সেদিন সবাই আশা করেছিলেন এবারে ন্যাটোকে গুটিয়ে দেয়া হবে। কারণ, যে উদ্দেশে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই সোভিয়েত ইউনিয়নই আর নেই। তাছাড়া, ন্যাটোর মোকাবিলার লক্ষ্যে যে ওয়ারশ চুক্তি হয়েছিল, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পূর্ব ইয়োরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলির বিপর্যয়ের পর তারই যখন অবসান হয়েছে, তখন ন্যাটোর প্রাসঙ্গিকতা আর কোথায়? ধাপে ধাপে নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি কমানোর চুক্তিও সই হয়ে গিয়েছে। সেকারণে স্বাভাবিক ভাবনা ছিল ন্যাটোর আর কোনো প্রয়োজন নেই। ঠান্ডা যুদ্ধের অবসানের পর পেরিয়ে গিয়েছে তিন দশক। ন্যাটোকে কেন সম্প্রসারিত হচ্ছে? ভেঙে দেয়ার পরিবর্তে কেন সে নিজেকে সম্প্রসারিত করে চলেছে? ওয়ারশ নেই, তবে ন্যাটো কেন? আজ সোভিয়েত নেই, তাহলে শত্রু কে? লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া এবং এস্তোনিয়ার মতো বাল্টিক রাষ্ট্র-সহ পোলান্ড, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, চেক সাধারণতন্ত্র, স্লোভাকিয়া, স্লোভানিয়া, রোমানিয়ার মতো পূর্ব ইয়োরোপের সাবেক ‘সোভিয়েত’ সাধারণতন্ত্রগুলির অধিকাংশই এখন ন্যাটোর শৃঙ্খলে। যুগোস্লাভিয়ার উপর বর্বর বোমাবর্ষণ-সহ ন্যাটো একাধিক যুদ্ধ চালিয়েছে বলকান অঞ্চলে। আর এখন রাশিয়া সীমান্তে ইউক্রেন, জর্জিয়াকে তাদের সদস্য করতে চাইছে।

১৯৯০ থেকে ন্যাটো আজ বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সদস্য সংখ্যা ষোল থেকে বেড়ে এখন ৩০। পূর্ব ইয়োরোপ, বলকান ছাড়িয়ে এমনকী সামরিক হস্তক্ষেপ করেছে আফ্রিকায়। এবং মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ায়। আফগানিস্তানে ন্যাটো’র বর্বরতাকে দেখেছে গোটা দুনিয়া। নামে নর্থ অতলান্তিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন। কোথায় উত্তর অতলান্তিক, আর কোথায় কাবুল! প্রশ্ন হচ্ছে, কেন লাগাতার যুদ্ধের প্ররোচনা দিয়ে গেল ওয়াশিংটন, লন্ডন? যেমন প্রচার তোলা হয়েছিল ১৯৯৯-তে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে, ২০০১ সালে আফগানিস্তান, ২০০৩ সালে ইরাক এবং ২০১১-তে লিবিয়া এবং সিরিয়ার বিরুদ্ধে। ‘শান্তিপূর্ণ পথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ডনবাস সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত’ বলে দাবি জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক পেত্রো সিমোনেঙ্কো। প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘গত সাতবছর ধরে নিরাপত্তা পরিষদ কেন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতিকে একবারের জন্যও আমন্ত্রণ জানাল না, যাতে সংঘাতের শান্তিপূর্ণ নিস্পত্তির জন্য তিনি কী করেছেন, তা নিয়ে রিপোর্ট করতে পারেন? কেন একের পর এক সমরাস্ত্র-বোঝাই মার্কিন ও ব্রিটিশ বিমান কিয়েভে (ইউক্রেনের রাজধানী) নামছে? ওরা কী আদৌ শান্তি চায়?’ মোটেই চায় না। আসলে ব্রিটেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পোলান্ডের মধ্যে সম্প্রতি হয়েছে একটি ‘ত্রিপাক্ষিক সামরিক জোট’, যার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে ‘ইউক্রেনের নাৎসি-অলিগার্কের শাসক জমানা’। তাঁর বক্তব্য, ‘আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির নির্দেশে নতুন করে ইয়োরোপের পুনর্বণ্টনের লক্ষ্যেই’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর এই তৎপরতা। আর নেপথ্যে রয়েছে মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ এবং ব্রিটিশ সংস্থা এম ১৬। নাহলে ‘কেন ২০০০ সালে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি লন্ডনে এম ১৬-র প্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন? আর কেনই বা এবছর জানুয়ারিতে কিয়েভে সিআইএ-র প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করবেন?’

আমরা দেখছি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের সূচনা হয়েছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সীমানা লঙ্ঘন করে একাধিক এলাকা দিয়ে রাশিয়ার বাহিনী অগ্রসরমান, ইতিমধ্যেই এই হামলায় যুক্ত হয়েছে বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী। ওডেসার বন্দরে রাশিয়ার সৈন্যরা অবতরণ করেছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটি এলাকা – যেখান রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০১৪ সাল থেকে দখল করে আছে তাদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে রাশিয়া এই যুদ্ধের যৌক্তিকতা প্রমানের চেষ্টা করছে। রাশিয়ার এই আচরণ কেবল যে আন্তর্জাতিক আইনের নগ্ন বরখেলাফ তাই নয় ১৯৯৪ সালের একটি স্মারকের বরখেলাফও। ১৯৯৪ সালে ইউক্রেন যখন তার হাতে থাকা সব ধরনের পারমানবিক অস্ত্র ধ্বংস করে নন-প্রলিফিরেশন অব নিউক্লিয়ার উইপেন ট্রিটি বা পারমানবিক অস্ত্র বিস্তার নিয়ন্ত্রন যুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হয় সেই সময় একটি স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তাতে স্বাক্ষর করেছিলো ইউক্রেন, রাশিয়া, বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র। বুদাপেস্টে ৫ ডিসেম্বর ১৯৯৪ সই করা এই স্মারকে ইউক্রেনকে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছিলো যে তার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হবেনা। মাত্র ৬ অনুচ্ছেদের এই স্মারকের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিলো “রাশিয়ান ফেডারেশন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে হুমকি বা বল প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার জন্য তাদের বাধ্যবাধকতা পুনর্ব্যক্ত করছে, এবং তাদের কোনও অস্ত্রই ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা বা জাতিসংঘের সনদের আওতায় গৃহীত ব্যবস্থা ছাড়া আর কোনও কারনে ব্যবহার করা হবে না” (ইংরেজি ভাষ্য -The Russian Federation, the United Kingdom of Great Britain and Northern Ireland and the United States of America reaffirm their obligation to refrain from the threat or use of force against the territorial integrity or political independence of Ukraine, and that none of their weapons will ever be used against Ukraine except in self-defence or otherwise in accordance with the Charter of the United Nations.)। রাশিয়ার আগ্রাসন সেই চুক্তির বরখেলাফ এবং ইউক্রেনের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। যারা রাশিয়ার এই আগ্রাসনের পক্ষে কথা বলছেন তারা এই স্মারকটি পাঠ করতে পারেন। এই চুক্তিতে কোথাও বলা হয়নি যে, ইউক্রেন চাইলে ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবেনা। ফলে রাশিয়া এবং তার সমর্থকরা নিশ্চয় এটা বিস্মৃত হবেন না যে, বড় এবং শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রতিবেশীদের জন্যে এই আগ্রাসন কী বার্তা পাঠাচ্ছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার এই আগ্রাসনের ফল কেবল ইউক্রেন বা ইউরোপ ভোগ করবে বলে যারা মনে করছেন তারা আগামীকাল বিশ্ব বাজারের দিকে নজর রাখুন। এর আশু অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া আপনার ঘরে পৌঁছুতে দেরী হবেনা। তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে এর দীর্ঘমেয়াদী ফল হচ্ছে সারা বিশ্বে অস্থিরতার নতুন যুগের সুচনা হলো। আর এই যুদ্ধে, যে কোনও যুদ্ধের মতোই, যে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের শুরু হলো তা শিগগির শেষ হবেনা।

বস্তুত ১৯৯১ সালে  সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার পরে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও ইউক্রেন বৈশ্বিক আলোচনায় আসে ২০১৩ সালের দিকে। ওই বছর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচের সরকার ইউক্রেন-ইউরোপীয় ইউনিয়ন অ্যাসোসিয়েশন চুক্তি স্থগিত করে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘ইউরোমাইদান’ নামে বিক্ষোভ দানা বাঁধে। এই বিপ্লবটা ইয়ানুকোভিচের উৎখাত এবং একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত করে। ২০১৪ সালে ইয়ানুকোভিচের পতনের পর ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্ষমতায় আসেন। প্রসঙ্গত, ইয়ানুকোভিচ রাশিয়াপন্থি, অপরদিকে  জেলেনস্কি অনেকটা পশ্চিমা-ঘেঁষা মার্কিনপন্থি হিসেবে পরিচিত।  ২০১৪ সালে জেলেনস্কি ক্ষমতায় আসার পরে রাশিয়া রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এমনকি নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে যায়। তবে ইয়ানুকোভিচের পতনের পর জেলেনস্কি ক্ষমতা এলেও বিদ্রোহীদের দমনে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হয়। বিশেষ করে পশ্চিম অঞ্চলে দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক এলাকায় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যায় সরকার এবং বিদ্রোহীরা। এই বিদ্রোহীদের শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছিল রাশিয়া। ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া ঘিরে রাশিয়ার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব অনেক বেশি। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পেছনে সবচেয়ে গুরুত্ব পেয়েছে পানি ও বন্দরের বিষয়টি। ক্রিমিয়ার সেভেস্তাপোল বন্দরটি বাল্টিক সাগরে রাশিয়াকে প্রবেশ এবং সারা বছর উষ্ণ গরম পানি পাওয়ার উৎসের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটি যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তবে বাল্টিক সাগরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলতে পারে রাশিয়া। বন্দর ছাড়াও ক্রিমিয়া প্রায় ২০০ বছর রাশিয়ার অংশে ছিল এবং সেখানকার জনগণ জাতিগতভাবে রুশ। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ ক্রিমিয়াকে তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের হাতে হস্তান্তর করে। তখন নিশ্চয়ই ভাবনায় ছিল না, সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যেতে পারে এমনকি রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে। এ ছাড়া ন্যাটোর মতো সামরিক জোটের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করতে পারে ইউক্রেন।

অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়ায় পরমাণু শক্তির পরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো গ্যাস। সমগ্র ইউরোপের তেল এবং গ্যাসের চাহিদার ২৫ শতাংশ আসে রাশিয়া থেকে। লাটভিয়া, এস্তোনিয়ার মতো দেশগুলো গ্যাসের জন্য শতভাগ রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীল। জার্মানির ৫০ শতাংশ গ্যাস আসে রাশিয়া থেকে। এই ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহের জন্য ইউক্রেনকে প্রবেশদ্বার বলা হয়ে থেকে। রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৪০ শতাংশ পাইপলাইন গেছে ইউক্রেনের মধ্য দিয়ে। তাই ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া বিকল্পভাবে ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে বাল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে জার্মানিতে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পকে অগ্রগতিকে থামিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। কারণ, ভবিষ্যতে রাশিয়া গ্যাসকে ইউরোপে রাজনৈতিক প্রভাবের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। ইউক্রেন ঘিরে রাশিয়া এবং পশ্চিমাদের নিজেদের আন্তর্জাতিক প্রভাব ধরে রাখার জন্য পশ্চিমা এবং রাশিয়ার মধ্যে সংঘাতের বিষয়টি দেখছে বিশ্ব এবং বিশ্ব সংস্থা। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধ না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে, মস্কো কোনো কিছুই গ্রাহ্য করছে না। কারণ, যেভাবেই হোক তাদের ইউক্রেনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। গণমাধ্যমের বরাতে জানা যাচ্ছে, কিয়েভে মুহুর্মুহু আক্রমণ চালাচ্ছে রাশিয়া। এমনকি ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়া তাদের রাজধানী কিয়েভে রকেট হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে ন্যাটো থেকে পূর্ব ইউরোপে স্থল এবং বিমানবাহিনী বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। ইউরো-আটলান্টিক সাগরের নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনী মোতায়েন করতে যাচ্ছে পশ্চিমা গোষ্ঠী। যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কায় লাখ লাখ মানুষ ইউক্রেন ত্যাগ করে সীমান্তবর্তী এলাকা বা পাশ্ববর্তী দেশে চলে যাচ্ছে। ইউক্রেনকে ঘিরে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, যেন বিশ্ব তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে!

লেখক: প্রধান সম্পাদক,এসবিডি নিউজ24 ডট কম।।

jsb.shuvo@gmail.com

প্রধান সম্পাদক