যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: ঘর থেকে বেরিয়েই রাজধানীবাসীকে পড়তে হচ্ছে যানজটে। সকাল-বিকেল প্রধান সড়কগুলো যেমন যানজটে স্থবির; পাড়া-মহল্লা, গলিঅলিতেও একই চিত্র। ১০ মিনিটের পথ যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগছে। রোজা আর চৈত্রের দাবদাহে যানজটে অতিষ্ঠ জনজীবন। মানুষের প্রশ্ন- এই ভোগান্তির শেষ কোথায়? কবে মুক্তি মিলবে?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি ছিল ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার। ২০১৫ সালে তা কমে হয় সাত কিলোমিটার। ২০১৭ সালে এ গতি হয়েছে পাঁচ কিলোমিটার। এখন তা আরও কম। এভাবে চলতে থাকলে ২০২৭ সালে ঢাকায় গাড়ির গতি শূন্যের কাছাকাছি নেমে যেতে পারে।
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কের একই চিত্র। করোনায় ‘লকডাউন’ চলাকালে যানজট ছিল না। অফিস-আদালতের পর গত ১৬ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরোদমে চালু হওয়ার পর যানজট হচ্ছে করোনাকালের আগের চেয়েও বেশি। অন্যান্য বছর যানজটের কারণে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। করোনার ক্ষতি পোষাতে এবার তা খোলা রাখা হয়েছে। সকালে এক ঘণ্টার ব্যবধানে স্কুল-কলেজ ও অফিস খুলছে। সব ছুটিও হচ্ছে দেড় ঘণ্টার ব্যবধানে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এ কারণে সকাল ও বিকেলে রাজধানীতে গাড়ির চাপ ভয়াবহ বাড়ছে।
রোজায় সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা এসব স্টেশনে দুপুর থেকে গাড়ি ভিড় করছে গ্যাস নিতে। অন্যদিকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নকাজের জন্য সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এতে যানবাহন দ্রুত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। এসব কারণে সড়কে তীব্র হচ্ছে যানজট।
মগবাজার ও বাংলামটর এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে থাকা একাধিক কর্মকর্তা জানান, মগবাজার থেকে বাংলামটরের দিকে যাওয়ার লেনে ওয়াসার কাজ চলছে। তাই বাস চলাচল বন্ধ। এই রুটের বাস ফ্লাইওভার ব্যবহার করে বাংলামটরের দিকে নামছে। এ জন্য ফ্লাইওভারে গাড়ির চাপ বাড়ছে। এক কর্মকর্তা জানান, মগবাজারে ফ্লাইওভারে ওঠার বাম পাশের অনুদীপ ফিলিং স্টেশনটি বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার মগবাজার রেলগেটের অদূরে অবস্থিত ফিলিং স্টেশনে দুপুর থেকে গাড়ি লাইন দেয় সিএনজি নেওয়ার জন্য। অন্যদিকে অফিস ছুটির পর গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। এ কারণে আজ মগবাজার ও বাংলামটর এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনাকালের দুই বছরে ২৫ হাজার নতুন প্রাইভেটকার নেমেছে ঢাকার রাস্তায়। ২০২১ সালে রেকর্ড সংখ্যক ৯৯ হাজার ৮১০টি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়েছে রাজধানীতে।
এআরআইর পরিচালক ড. হাদীউজ্জামান বলেন, পরিবহনে শৃঙ্খলার জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। ঢাকায় এই তিন ব্যবস্থাপনা একসঙ্গে কাজ করছে না। পরিবহন শুধু অবকাঠামো নয়, বরং ব্যবস্থা। যানজট নিরসনে শুধু ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, সড়ক নির্মাণের মতো অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ব্যবস্থাপনা ও যানবাহনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়নি। তার ফল হচ্ছে এখনকার অসহনীয় যানজট। মহাখালী ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আশফাক আহমেদ বলেন, গুলশান-বনানীর গাড়ি প্রধান সড়কে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়। ওই এলাকার গাড়ি যখন বিমানবন্দর সড়কে ওঠে তখন আবার প্রধান সড়কে গাড়ির চাপ বেড়ে যায়। তবে কাকলী ক্রসিং খুলে দেওয়ায় অনেকটা সুবিধা হয়েছে।