~~~নুরুন্নাহারের জীবন~~~
তানজারীন ইফফাত শাতি: নুরুন্নাহারের ধমনীতে প্রবাহিত রক্ত কেঁপে কেঁপে ওঠে। সে শুধু গৌতমকে খোঁজে। যে গৌতম তার তিন বছরের শিশুকে নিয়ে পালিয়ে যায়। গৌতম কেন ছেড়ে গেছে নুরুন্নাহারকে জানা নেই তার। সে শুধু জানে তার সন্তানকে ফিরে পেতে হবে। আজ বা কাল গৌতম ফিরবে সে অপেক্ষা করে। নেই কোন কুল কিনারা। ছেড়ে যাবার পর সে কি আর ফিরবে? হাজারো প্রশ্ন মনে। একদিন ঠিকই ফেরে গৌতম। কিন্তু সেই সব দিন পার হয়ে গেছে যখন প্রয়োজন ছিল গৌতমকে ওর জীবনের জন্য। তবুও ১৭ বছরের ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে সব কিছু মেনে নেয়। প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলেও সে একা পথ চেয়ে ছিল স্বামীর জন্য সেটা অস্বীকার করার নয়। তাই গৌতমের ফিরে আসাটা প্রয়োজনের থেকেও কাঙ্খিত। সন্তানের ছায়া আবেগপ্রবণ করে। এত দিন পর মাতৃত্বের কাছে হার মানে। গৌতমকে গৌণ মনে করলেও তার ফিরে আসাকে বাকি জীবনের জন্য আঁকড়ে ধরতে চায়। কিন্তু কেন গৌতম ছেড়ে গিয়েছিল নুরুন্নাহারকে তা বরাবরি অজানাই থেকে যায় নুরুন্নাহারের কাছে। সে কথাটি খতিয়ে দেখার অনুরোধ করেও বারবার ব্যর্থ হয় গৌতম। কি ছিল সেই কারণ সেটা নিয়ে আর বেশি ভাবতে চায় না নুরুন্নাহার। ভাবতে পরেও না আর।
…
গৌতমের সব দোষও মেনে নিতে পারেনি নুরুন্নাহার। হয়ত সে নিজেও আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়নি। নিজের পথে চলে গেছে গৌতম। আর হিসাব কষে না নুরুন্নাহার। নৈতিকতার চেয়ে বেশি মানবিক হয়ে ওঠে। প্রাণের খোরাক সংসারের আরতি সব সম্মুখে পিছনে আটকায়। এপাশ ওপাশে ঘিরে ধরে। অস্বীকার করবে কি করে? তাইতো এতদিন পর পুরানো সংসারকে নতুন ভেবে গ্রহণ করে। গৌতমের ভুল নয় বরং নিজের ভুলকে অতিক্রম করে সন্তান সুখে আপ্লুত হয়। সন্তান কে নিয়ে যে গৌতম একবার চলে গিয়েছিল সে কি আবার হাত বাড়াবে পরবর্তী জীবনের জন্য? ভাবতে ভালো লাগে এতটুকু যে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে নতুন একটি জীবনের সূচনা। তবে গৌতম কি ভালোবাসায় আর একবার আঁকড়ে ধরতে চাইবে? পারবে কি আগের মত ধীর স্থির জীবনে ফিরতে? হয়ত সে পারবে না। জানে নুরুন্নাহার। তবে এও জানে যে ছেলেকে সে কাছে পাবে এটাই তার জীবনের একমাত্র চাওয়া। পরিবারের আপন বলতে সে কাউকে পায় নি। নিগৃহীত হয়েছিল। জীবনের পথ পরিক্রমায় আকড়ে থাকে নি কাউকে। একাই সংগ্রাম করেছে। বিভিন্ন ঘাটে নিজেকে বেঁধেছে। কিন্তু আপন হয় নি কেউ। কর্মসংস্থান করেছে নিজে। যুক্ত থেকেছে নানা পেশার মানুষের সঙ্গে নিজের কাজ এবং জীবিকার জন্য। এখন সে একা। কই আপন হয় নি তো কেউ? কাজ ওকে নিয়ে গেছে এক অন্য দূরত্বে। সেখানে শুধুই জীবনকে দান। গ্রহণ করতে পরেনি। অনেক পেশাদারিত্বের মাঝে ভালোবাসাকে আর খুঁজে পায় নি। নতুন করে সংসার সাজানো হয় নি। জীবনে নিজেকে বিলিয়েছে। উজার করে । ভালোবাসা আর আসে নি। ছেলে প্লাবণকে দেখে সে সাধ আবার জেগে ওঠে। নতুন করে ভালোবাসা হয়ত আসবে না। জীবন তো আসবে। চেষ্টা করতে দোষ কোথায়? গৌতম ফিরলেও ফিরবে না আগের মত। সুতরাং তাকেই পারতে হবে….। পারবে কি?
…
এই আশায় এগিয়ে চলে নুরুন্নাহারের জীবন।