সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবার সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম। হেফাজতে ইসলাম ক্ষমতাসীন সরকারি দল বা সরকার বিরোধী জোট- কোন পথে হাটছে এই নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, হেফাজতে ইসলাম ‘রাজনীতি করবে না’ কিংবা ‘রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিয়ে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে না’- এমন শর্তে বাংলাদেশ সরকারের কাছে ‘মুচলেকা’ দিয়ে জেল-হাজতে থাকা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জামিন চেয়েছিল। প্রথম দিকে বিষয়টি সরকার আমলে না নিলেও চলতি বছরের মে মাসে হেফাজতে ইসলামের আটক নেতা-কর্মীদের শতকরা ৯৯ ভাগই মুক্তি পেয়েছেন। এখন আটক আছেন আট নেতা এবং তিনজন কর্মী-মোট ১১ জন। হেফাজত নেতারা বলেছেন এরা খুব দ্রুতই ছাড়া পাবেন সেরকম আশ্বাস দিয়েছে সরকার। যে কারণেই দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের সক্রিয় হচ্ছে হেফাজতে ইসলাম।
২০১৩ সালের ৫ই মে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ করে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছিল হেফাজতে ইসলাম। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে হেফাজতের বিভিন্ন তৎপরতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিভিন্নভাবে প্রভাব ফেলেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিভিন্ন সময়ে হেফাজতে ইসলামকে সরকার বিরোধী তৎপরতা করতেই দেখা গেছে। দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সময়ে হেফাজত মাঠে নামলে অবশ্যই সরকার বিরোধীদের পথেই হাটবে। তাদের নেতা-কর্মীদের মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের শর্তে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সরকারকে ‘বিব্রত না করা’র যে অঙ্গীকার করেছিল, সেই অঙ্গীকার হেফাজতে ইসলাম ভাঙতে পারে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামের একাধিক নেতা-কর্মী কারাগারে থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ নির্বাচনকে ঘিরে সক্রিয় হয়ে ওঠেছে সংগঠনটি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজ- এর ঢাকা মহানগরের কর্মী সম্মেলন করেছে হেফাজতে ইসলাম। কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। অপরদিকে, সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান গণমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়েছেন। সেই বিবৃতিতে দাবি করেছেন, হেফাজত কোনো ‘মুচলেকা’ দেয়নি। এক্ষেত্রে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির বিষয়ে সরকার নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। তবে মামুনুল হকের বিষয়ে সরকারের জোর আপত্তি আছে।
বিবৃতিতে শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, ‘কয়েকটি গণমাধ্যমে হেফাজতকে জড়িয়ে কিছু সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়েছে। একই সঙ্গে হেফাজত রাজনীতি না করার বিষয়ে সরকারকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী রহ. হেফাজতকে প্রতিষ্ঠাই করেছিলেন অরাজনৈতিক ও ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন হিসেবে। হেফাজত কোনোকালেই নিজেদের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করেনি, আগামীতেও করবে না।
এ সব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বক্তৃতা, বিবৃতি দেয়া রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কাজ। একটি ইসলামী সংগঠন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বক্তৃতা, বিবৃতি দিতে পারে না।
এ ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলাম রাজনৈতিক সংগঠন না হলেও পরোক্ষভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে। মূলত কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির দাবিই হেফাজতকে রাজনৈতিক অঙ্গনে টেনে আনছে। এছাড়া পাঠ্যবই নিয়ে হেফাজতে ইসলামসহ অনেক ইসলামী সংগঠনই আপত্তি তুলেছিল। সেই ভুল সংশোধনে ইতিমধ্যে উদ্যাগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কাজেই এই ইস্যুটি নিয়ে হেফাজতসহ ইসলামী সংগঠনগুলোর কোনো ধরনের তৎপরতা থাকার কথা নয়।
তবে হেফাজতে ইসলাম সরকারের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছে না বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে- এটা সম্পূর্ণই সময়ের ব্যাপার। এখন সে সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে এবং অপেক্ষার প্রহর শেষে সময়ই বলে দিবে- কোন পথে হাটছে হেফাজত।