ইউক্রেনীয় জনগণ বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করছে: বাইডেন
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: ইউক্রেনের জন্য ছয় হাজার কোটি ডলার সামরিক সহায়তা পাঠানো হবে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে আশ্বাস দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে এর জন্য কংগ্রেসের চূড়ান্ত অনুমোদন দরকার হবে। রিপাবলিকানরা এই প্রস্তাবে সমর্থন দেবে বলেই বিশ্বাস বাইডেনের।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি এই সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিবিসির প্রতিবেদন অনুসারে, ইউরোপে ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি এড়াতে এর আগে আরও অস্ত্র সরবরাহের জরুরি আবেদন জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। অস্ত্রসহ পর্যাপ্ত সমর সরঞ্জামের অভাবে এরই মধ্যে আভদিভকার যুদ্ধ থেকে ইউক্রেনকে পশ্চাদপসরণ করতে হয়েছে। এর জন্য কংগ্রেসের সমর্থনের অভাবকে দায়ী করছে বাইডেন প্রশাসন।
গত মে মাসে বাখমুত দখলের পর আভদিভকা দখল দীর্ঘ একটা সময়ের পর রাশিয়ার প্রথম উল্লেখযোগ্য জয়। আভদিভকা পূর্বাঞ্চলে রুশ দখলকৃত আঞ্চলিক রাজধানী দোনেৎস্কের প্রবেশদ্বার।
হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয়তার ফলে সরবরাহ কমে যাওয়ায় ইউক্রেনীয় সৈন্যদের গোলাবারুদের বরাদ্দ শেষ হয়ে যায়। এতে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী আভদিভকা থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।’
কয়েক মাসের রাজনৈতিক টানাপড়েনের পর চলতি সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন সিনেট ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তার প্যাকেজ অনুমোদন করে। এই প্যাকেজে ইউক্রেনের জন্য ছয় হাজার কোটি ডলার বরাদ্দ ছিল। সিনেটে অনুমোদিত হওয়ার পরও প্যাকেজটি নিয়ে এখনো হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে ভোটাভুটি বাকি। এই প্যাকেজ নিয়ে আমেরিকার রিপাবলিকান দলের সদস্যরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে আছেন।
গত শনিবার বাইডেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখুন, ইউক্রেনীয় জনগণ এত সাহসিকতার সঙ্গে এবং বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছে যে এখন যখন তাদের গোলাবারুদ ফুরিয়ে এসেছে, তখন আমরা সরে যাব- এমন ধারণাকে আমি অযৌক্তিক বলে মনে করি।’
বাইডেন আরও বলেন, ‘আমার কাছে এটা অনৈতিক মনে হয়। আমি মনে করি, এটা জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থানের বিপরীত। সুতরাং, যতক্ষণ আমরা প্রয়োজনীয় গোলাবারুদ ও আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না পাচ্ছি, ততক্ষণ আমি লড়াই চালিয়ে যাব।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও মার্কিন আইনপ্রণেতাদের এই আর্থিক প্যাকেজ অনুমোদনের আহ্বান জানিয়েছেন। জেলেনস্কি টেলিগ্রামে বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্টের পূর্ণ সমর্থনের ওপর নির্ভর করতে পারি।’
জার্মানি সফরের সময় জেলেনস্কি ইউরোপের ‘বিপর্যয়কর’ পরিস্থিতি এড়াতে অস্ত্রের জন্য জরুরি আবেদন করেছেন।
মিউনিখে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে অস্ত্রের কৃত্রিম সংকটের মধ্যে রাখা, বিশেষ করে গোলাবারুদ ও দূরপাল্লার অস্ত্রসংকট পুতিনকে যুদ্ধের বর্তমান তীব্রতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। ইউক্রেন প্রমাণ করে দিয়েছে যে আমরা রাশিয়াকে পিছু হঠতে বাধ্য করতে পারি। আমরা আমাদের ভূমি ফিরিয়ে আনতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তা ইউক্রেনকে জিজ্ঞেস করবেন না। নিজেকে প্রশ্ন করুন, পুতিন কেন এখনো তা চালিয়ে যেতে পারছে?’
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে টিকে থাকতে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য মিত্র দেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। এদিকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী কয়েক গুণ বড় এবং গোলাবারুদের সরবরাহও বিপুল।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন বলেন, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে সাহায্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ‘সত্যিকারের পার্থক্য’ আনবে।
বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের সংসদ সদস্য ওলেকসি গোনচারেনকো বলেন, আমেরিকান নেতৃত্ব তাঁকে হতাশ করেছে।
ওলেকসি বলেন, ‘আপনি যদি আপনার সহযোগীর ওপর ভরসাই না করতে পারেন; কারণ, আমেরিকা বলেছিল, আপনারা আমাদের ওপর ভরসা করতে পারেন। আমরা যত দিন প্রয়োজন ইউক্রেনের সঙ্গে থাকব। এখন কোথায় গেল ওই সব প্রতিশ্রুতি? প্রতিদিন আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছে।’