প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ হবে: এবি পার্টি

প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ হবে: এবি পার্টি

এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: মহান স্বাধীনতা দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ এবি পার্টি’র উদ্যোগে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন বিজয়-৭১ চত্ত্বরে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ। বক্তব্য রাখেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, মহানগর উত্তরের আহবায়ক আলতাফ হোসাইন ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রিপন মাহমুদ।

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, পাকিস্তানী শোষন জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় অর্জিত হয়েছিল আওয়ামীলীগ তার সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে বলে অভিযোগ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি ‘এবি পার্টি’। তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার ভুলুণ্ঠিত করে আওয়ামীলীগ জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ফলে এখনও বাংলার মানুষ প্রকৃত অর্থে পরাধীন ও শোষন বৈষম্যের শিকার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইশতিয়াক আজিজ উলফাৎ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালো রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকার সর্বত্র নিরস্ত্র মানুষ মেরে আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিলো। ২৬ মার্চে আমরা বের হয়ে যখন রাস্তায় নারী শিশুর রক্ত দেখেছি তখন বুঝেছি আর পাকিস্তান মেনে নেয়া যাবেনা। মুক্তিযুদ্ধে আমার আপন বড় ভাই সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। আজ এই ৫৩ বছর পরও আমার ভাইয়ের রক্ত শুকায়নি। ১৬ ডিসেম্বর যেদিন পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করলো সেদিনও ষড়যন্ত্র করে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানীকে সেখানে উপস্থিত রাখা হয়নি। সেদিন তাকে সিলেটে পাঠিয়ে তার হেলিকপ্টারে গুলি করা হয়। সেদিনই আমরা বুঝতে পেরেছি আমরা নতুন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বলতে চাই, যত ষড়যন্ত্রই করুন না কেন এটা সিকিম নয়, ভুটান নয়, এটা বাংলাদেশ। কোন ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবেনা। প্রয়োজনে আবার যুদ্ধ হবে, সেই যুদ্ধে প্রথম আমরা রক্ত দিবো, বাংলাদেশকে আবার মুক্ত করবো ইনশাআল্লাহ।

সভাপতির বক্তব্যে এএফএম সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, ৬২, ৬৯ ও ৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা বৈষম্যের বিরুদ্ধে যে শ্লোগান ও দাবি তুলেছিল, দূঃখজনকভাবে এখন আমাদেরকে আওয়ামী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে একই দাবি তুলতে হচ্ছে। পাকিস্তানী জান্তারা যেভাবে গুলি করে নিরীহ মানুষ মেরে তাদের মসনদ রক্ষা করতে চেয়েছিল, বর্তমান আওয়ামী শাসক গোষ্ঠীও একই কায়দায় গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমনে নির্দয়ভাবে গুলী করে মানুষ মারছে। সুতরাং আবারও জনগণকে ৭১ এর মত ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং আওয়ামী হানাদারদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে বলে তিনি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের বহু মানুষ আজ কষ্টে আছে। নানান সমস্যা নিয়ে দুঃখে জীবন যাপন করছে। একেক মানুষের সমস্যা একেক রকম। আমাদের অনেক তরুণ তরুণী ভাই কষ্টে নানা ধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে পরছে। আমরা তরুণ ভাই বোনদের বলতে চাই, কষ্টে জীবন নষ্ট করলে চলবেনা। কষ্টকে শক্তিতে পরিণত করে আমাদের জীবন সংগ্রামের নতুন লড়াই শুরু করতে হবে। তিনি বলেন, এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, যা আজও প্রতিষ্ঠা হয়নি। শেখ মুজিব স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন মানুষের মুক্তির জন্য কিন্তু তিনি ক্ষমতায় এসে সকল রাজনৈতিক দল বন্ধ করে দিয়েছিলেন সকল পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তেমনি আজও আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে বিরোধী রাজনৈতিক দল সমুহকে দমন করে মানুষের সকল অধিকার হরণ করেছে। পাকিস্তানী শোষন জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্ত হয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচারের ভিত্তিতে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে যে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বিজয় অর্জিত হয়েছিল আওয়ামীলীগ তার সকল অর্জনকে ধ্বংস করেছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অঙ্গীকার ভুলুণ্ঠিত করে আওয়ামীলীগ জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ফলে এখনও বাংলার মানুষ প্রকৃত অর্থে পরাধীন ও শোষন বৈষম্যের শিকার।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, গত ৫৩ বছর আগে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা যে অঙ্গীকারের ভিত্তিতে রক্ত দিয়েছিলেন তা আজ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর রিপোর্ট অনুযায়ী দেশের ৪ কোটি মানুষ ঋণ করে খাবার কিনছে। অথচ বাংলাদেশের সরকারের লোকজন আর আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ইউরোপ আমেরিকার বসতী গড়ে তুলেছে। লেখা পড়া করে বেকারত্বের যে সনদ আজ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে তা আজ তরুণদের নিঃস্ব করে ফেলছে। আমরা দেখেছি ৭২ থেকে ৭৫ পর্যন্ত যখন আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় ছিলো তখন দেশের মানুষ ডাস্টবিনে কুকুর বিড়ালদের সাথে খাবার ভাগাভাগি করেছে অথচ আওয়ামীলীগের নেতাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে শাদি হয়েছে ঢাকা ক্লাবে বিলাশ বহুল ভাবে। আজও তারা আমাদের উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে। বাকশালের উন্নয়ন মানে আমরা বুঝতে পারছি, বাকশালের উন্নয়ন মানে দুর্ভিক্ষ, নারী নির্যাতন, আর আমার আপনার টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ফুর্তির জীবন। কাজেই স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে, গণ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে বাকশাল মুক্ত করতে হবে।

আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম চুন্নু, বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম, জাগপার প্রেসিডিয়াম সদস্য আসাদুর রহমান খান, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, সহকারী সদস্যসচিব শাহ আব্দুর রহমান, গাজীপুরের আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার আলমগীর হোসেন, মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার ফারুক, আব্দুল হালিম খোকন, উত্তরের সদস্য সচিব সেলিম খান, যুবপার্টির গাজীপুর শাখার আহবায়ক মাসুদ জমাদ্দার রানা, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল হালিম নান্নু, ছাত্রপক্ষের আহবায়ক মোহাম্মদ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শাহজাহান ব্যাপারী, এনামুল হক, শাহীনুর আক্তার শীলা, ফেরদৌসী আক্তার অপি, রুনা হোসাইন সহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

এসবিডি নিউজ ডেস্ক

Related articles