বিকল্প ‘বন্ধুরাষ্ট্র’ খুঁজে নেয়ার আহ্বান
এসবিডি নিউজ24 ডট কম,ডেস্ক: ভারত বাদে বিকল্প বন্ধুরাষ্ট্র খুঁজতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজত ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার। সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরের জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ চত্বরে গণজমায়েতে তিনি এ আহ্বান জানান। গণজমায়েত শেষ করে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন হেফাজত নেতারা। সংগঠনটির সোমবারের কর্মসূচি ঘিরে ‘ভারতীয় দূতাবাসসহ নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে নিরাপত্তা জোরদার করে নগর পুলিশ।
এর আগে শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যার প্রতিবাদ এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন অভিমুখে আজ কর্মসূচির ঘোষণা দেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার। তবে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেয় হেফাজত। জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদ প্রাঙ্গণে গণজমায়েত শেষে তারা মিছিল নিয়ে কাজীর দেউড়ি মোড়ে গিয়ে দোয়া মাহফিল করেন। পরে কয়েকজন প্রতিনিধি গিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেন।
গণজমায়েতে মুফতি হারুন ইজহার বলেন, ‘বাংলাদেশকে ভারত ধ্বংসের দারপ্রান্তে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন রাষ্ট্র মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা, ভারতীয় আধিপত্যের জাল ছিন্ন করেছে। বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করবো আপনারা বিকল্প বন্ধুরাষ্ট্র খুঁজুন। আমরা পাকিস্তানের কথা বলছি না। আমরা পাকিস্তানের টাকা নেই না। পাকিস্তানের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং দক্ষিণ এশিয়ায় চীন রয়েছে। আরও অন্যদেশ রয়েছে। সেসব দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করুন। মুসলিম দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক করুন। তুরষ্ক আছে মালয়েশিয়া আছে। আগ্রাসী ভারতের তুলনায় পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সম্পর্ক করতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
গত ১৭ বছরের জন্য ভারতকে দায়ী করে এ হেফাজত নেতা বলেন, ‘বিগত ১৭ বছর চলা ফ্যাসিবাদ ও বিগত তিনমাস চলমান অস্থিরতার পেছনে শুধু হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে নয় হিন্দুস্তানকে আমরা দায়ী করতে চাই। হিন্দুস্তান শেখ হাসিনাকে আমাদের মাথার ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। এদেশের প্রত্যেকটি গুম খুনের পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা রয়েছে। আমাদের বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনোকিছু হবে না। আমরা ভারতের সাথে ভারসাম্য চাই। আমরা ভারতের সাথে যুদ্ধ চাচ্ছি না। কিন্তু ভারত যদি যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে চায়; তাহলে সেটা প্রতিহত করার শক্তি আমাদের আছে।’
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনকে হুঁশিয়ার করে হারুন ইজহার বলেন, ‘আপনি আপনাদের দেশের সরকারের সকল রাজনীতিবিদের মুখে লাগাম লাগান। আমাদের জানা আছে আপনার দেশের সামরিক বাহিনির গোয়েন্দা সংস্থার সামরিক হামলার পরিকল্পনা আছে। ভারতকে বলে দিতে চাই ১৭ বছর হাসিনা চাপিয়ে দিয়েছেন আর কোনো দালালকে আমরা মেনে নিবো না।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিবিদদের ‘বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার’ এর প্রতিবাদে গণজমায়েত ও স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি ঘিরে সোমবার সকাল থেকে নগরের জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে জড়ো হন হেফাজত নেতাকর্মীরা।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরীর সভাপতিত্বে গণজমায়েতে আরো বক্তব্য রাখেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরীস, মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির, সহকারী মহাসচিব মাওলানা হাবিবুল্লাহ আজাদী, মাওলানা জাফর আহমদ ভাটুয়া প্রমুখ।
যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মীর ইদরীস বলেন, ‘দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আর পিছনে ফিরে যাওয়া যায় না। আমরা নড়াচড়া করলে ভারত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। আমরা ভারতের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে প্রস্তুত ছিলাম। সংবিধান সংস্কার চলছে, সেখানে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়া হোক। প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রত্যেকেই আমরা সোলজার হবো, প্রত্যেকেই মুজাহিদ হবো। তখন দেখবো ভারত কিভাবে এদিকে তাকায়। সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানাই আমাদের সামরিক প্রশিক্ষণের সুযোগ দেয়া হোক।’
মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির বলেন, ‘আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে আসামি করতে হবে। যাদের আসামি করা হয়েছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।’ এ সময় তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মাথা ঘামালে, আইন আদালতের বিষয়ে মাথা ঘামালে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।